আমিয়াখুম জলপ্রপাত (Amiakum Waterfall) বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাত বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম আঞ্চলে নাক্ষিয়ং নামক স্থানে অবস্থিত। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা আমিয়াখুম জলপ্রপাত অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে বাংলার ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত। আমিয়াখুম বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। সবুজে ঘেরা পাহাড়ের বুক চিড়ে পাথরের বাঁধা ডিঙ্গিয়ে দুধসাদা রঙের ফেনা ছড়িয়ে প্রবল বেগে নিচে নেমে আসে শীতল জলধারা। লোকালয় থেকে কিছুটা দুরে বিশুদ্ধ প্রকৃর মাঝে দুপাশে উঁচু পাহাড়ের মাঝে তুমুল বেগে পানি প্রবাহের শব্দতরঙ্গের সুরের মূর্ছনা পর্যটকদের বিমোহিত করে।
লোকালয় থেকে কিছুটা দুরে। বহু কষ্ট স্বীকার করে পাহাড়ী দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমিয়াখুমের দর্শন পাওয়া যেন এক যথার্থ উৎসর্গ! বান্দরবানের প্রকৃতির ভূস্বর্গ আমিয়াখুমে সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষার শেষ ভাগ এবং শীতের শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকেরা এসে ভিড় করেন। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন কিংবা বানরবানের পাহাড় ট্র্যাকিং করার ইচ্ছে থাকে। তাহলে থানচির পাহাড়ী দুর্গম আমিয়াখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ করে আসতে পারেন।
আমিয়াখুম জলপ্রপাত যাবার উপায়
বাংলাদেশের যেখান থেকেই আমিয়াখুম যেতে চান না কেন প্রথমে বান্দরবান জেলা শহরে আসতে হবে। তারপর বান্দরবান থেকে থানচি, থানচি থেকে নৌকায় সাঙ্গু নদী পথ ধরে পদ্মমুখ অথবা রেমাক্রি বাজার যেতে হবে, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আমিয়াখুম জলপ্রপাত পৌঁছাতে হবে।
বান্দরবান যাওয়ার উপায়
দেশের অন্যান্য যেকোন জায়গা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম এসে, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে পূরবি ও পূর্বাণী পরিবহনে বান্দরবান যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে বান্দারবান যেতে ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আর সময় লাগবে তিন ঘণ্টা।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ট্রেন
ট্রেনের সময়সূচী (আন্তঃনগর)
- মহানগর প্রভাতী (৭০৪) ছাড়ায় সময় ০৭ঃ৪৫ পৌছানোর সময় ১৪ঃ০০ (প্রতিদিন)
- মহানগর এক্সপ্রেস (৭২২) ছাড়ায় সময় ২১ঃ২০ পৌছানোর সময় ০৪ঃ৫০ (রবিবার বন্ধ)
- তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২) ছাড়ায় সময় ২৩ঃ৩০ পৌছানোর সময় ০৬ঃ২০ (প্রতিদিন)
- সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৮) ছাড়ায় সময় ০৭ঃ০০ পৌছানোর সময় ১২ঃ১৫ (বুধবার বন্ধ)
ট্রেনের সময়সূচী (মেইল এক্সপ্রেস)
- চট্টগ্রাম মেইল (০২) ছাড়ায় সময় ২২ঃ৩০ পৌছানোর সময় ০৭ঃ২৫ (প্রতিদিন)
- কর্ণফুলী এক্সপ্রেস (৪) ছাড়ায় সময় ০৮ঃ৩০ পৌছানোর সময় ১৮ঃ০০ (প্রতিদিন)
- চট্টলা এক্সপ্রেস (৬৪) ছাড়ায় সময় ১৩ঃ০০ পৌছানোর সময় ২০ঃ৫০ (মঙ্গলবার বন্ধ)
আরও পড়ুনঃ কাপ্তাই লেক ভ্রমণ গাইড
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান যাবার উপায়
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান পর্যন্ত বাস সার্ভিস আছে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি বাস সার্ভিস সরাসরি বান্দরবান যাতায়ত করে। জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া চাইলে আপনি রেন্ট এ কারে করেও চট্রগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারবেন সে ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২,৫০০-৩,৫০০ টাকা।
বাসের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন
- ইউনিক পরিবহন (01963-622236)
- শ্যামলী পরিবহন (02-7541336, 02-7541336)
- হানিফ পরিবহন (01713-402673)
- ঈগল পরিবহন (01793-328045)
- সৌদিয়া পরিবহন (01919-654926)
- সেন্টমার্টিন পরিবহন (01762-691341)
- দেশ ট্রাভেলস (01705- 430566)
- এস আলম পরিবহন (02-9002702)
বান্দারবান থেকে থানচি যাবার উপায়
বান্দারবান জেলা শহর থেকে থানচির দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। বান্দারবান থেকে থানচি যাওয়ার জন্য কিছু সংখ্যক বাস রয়েছে। এ সব বাসে ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ ছাড়া আপনি চাইলে রিজার্ভ জীপ বা চাঁদের গাড়ি করে যেতে পারবেন থানচিতে। এ ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা। এক গাড়িতে যেতে পারবেন ১২ থেকে ১৪ জন।
থানচি থেকে পদ্মমুখ ও রেমাক্রি যাবার উপায়
থানচি পৌঁছে আপনাকে অবশ্যই একজন গাইড ঠিক করে নিতে হবে। গাইড ছাড়া নাফাখুম আমিয়াখুম জলপ্রপাত ভ্রমণে যাওয়া যায় না। উপজেলা প্রসাশন থেকে অনুমতি পাওয়া যে কাউকে গাইড হিসেবে নিতে পারেন। সাথে গিয়ে পরদিন থানচি ফিরে আসা পর্যন্ত গাইড ফি ৫০০০টাকা। গাইড ঠিক করার ব্যাপারটা আগে থেকে পরিচিত কোন গাইডকে কথা বলে ঠিক করে রাখতে পারেন অথবা আপনি থানচি গিয়েও করতে পারবেন। গাইড ঠিক করার পর আপনাকে থানচি বিজিবি ক্যাম্প ও থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। ভ্রমণকারী সকল সদস্যের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, কোথায় যাবে, কয়দিন থাকবে এইসব তথ্য কাগজে লিখে জমা দিতে হবে। আর এইসব কাজে আপনার গাইড সাহায্য করবে। আর মনে রাখবেন বিকেল ৩ টার পর থানচি থেকে রেমাক্রি যাবার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই সেইদিনই রেমাক্রি যেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ২টার মধ্যে থানচি থাকতে হবে। তা না হলে ঐদিন থানচি থেকে পরদিন সকালে রেমাক্রি যেতে হবে। এতে করে আপনার একদিন বেশি সময় লাগবে।
অনুমতি পাওয়ার পর থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে। এক নৌকায় ৪-৫ জন যেতে পারবেন। পদ্মমুখ অথবা রেমাক্রি পর্যন্ত নৌকা রিজার্ভ যাওয়া ও পরদিন আসা সহ ভাড়া ৬,০০০-৭,০০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। সাঙ্গুতে পানি কম থাকলে কিছু জায়গায় নৌকা থেকে নেমে হেঁটে যেতে হবে তখন সময় একটু বেশি লাগতে পারে। যাবার পথে সাঙ্গু নদীর রূপ আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। এছাড়া পথেই পরবে পদ্মমুখ, ভূ-স্বর্গ খ্যাত তিন্দু, রাজাপাথর বড়পাথর এলাকা ও রেমাক্রি ফলস। আর গাইড এর যাওয়া, থাকা খাওয়া ও অন্যান্য খরচ আপনাকে বহন করতে হবে।
থানচি থেকে আমিয়াখুম যেতে দুইটা রাস্তা ব্যাবহার করতে পারবেন
রাস্তা ১ঃ থানচি > পদ্মঝিরি > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম।
রাস্তা ২ঃ থানচি -> রেমাক্রি -> নাফাখুম -> জিন্নাহপাড়া -> দেবতাপাহাড় -> আমিয়াখুম।
আরও পড়ুনঃ জাফলং ভ্রমণ গাইড
রেমাক্রি থেকে নাফাখুম হয়ে আমিয়াখুম জলপ্রপাত যাবার উপায়
সাধারণত সকালে বান্দরবান থেকে রওনা দিলে রেমাক্রি পৌছাতে বিকেল হয়ে যায়। সেইদিন আর যাওয়া সম্ভব হয় উঠে না। সেই রাত রেমাক্রি বাজার থেকে পরদিন সকালে আমিয়াখুম জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। আর পথেই দেখা মিলবে নাফাখুম জলপ্রপাত। রেমাক্রি থেকে রেমাক্রি খাল ধরে হেঁটে নাফাখুম জলপ্রপাত যেতে সময় লাগে ২-৩ ঘন্টা। তবে সময় কত লাগবে তা নির্ভর করবে ভ্রমণকারী সঙ্গীদের হাঁটার গতির উপর আর কোন সময়ে যাচ্ছেন তার উপর। বর্ষায় রেমাক্রি খালে পানি অনেক বেশি থাকে। কোথাও কোমর পানি কিংবা কোথাও আরও বেশি।
কিছু জায়গায় রেমাক্রি খাল এপার ওপার করতে হবে। পানি বেশি থাকলে এই পারাপারে সময় বেশি লাগবে। চিন্তার কিছু নেই, এইসব জায়গায় আপনার গাইড আপনাকে সাহায্য করবে। রেমাক্রি খাল ও তার চারপাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতেই একসময় আপনি নাফাখুম জলপ্রপাতের পানি প্রবাহের গর্জন শুনতে পাবেন। নাফাখুম থেকে আবার রেমাক্রি খাল ধরে হেঁটে জিন্নাহপাড়া যেতে সময় লাগে ২-৩ ঘন্টা। জিন্নাহপাড়া পৌঁছানর পর সেই দিন আর আমিয়াখুম যাওয়া যায় না। জিন্নহপাড়ায় রাত্রিযাপন করে পর দিন ভোরে আমিযাখুম যেতে হবে।
ভ্রমণে কোথায় থাকবেন
থানচিতে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু কটেজ ও রেস্টহাউজ ধরণের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা। মান অনুযায়ী দিন প্রতি ভাড়া ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। থানচি ভালো কোথাও থাকতে চাইলে বিজিবি নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত অবকাশ কেন্দ্রে থাকতে পারবেন। এছাড়া রেমাক্রি বাজারে আদিবাসীদের ঘরে থাকার ব্যবস্থা আছে। সাঙ্গু নদীর পাশে আদিবাসীদের রেস্ট হাউজে কয়েকজন মিলে থাকতে হলে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১৫০ টাকা। এছাড়া আপনি নাফাখুম পাড়া, জিন্নাপাড়া, তুইছাপাড়া, নিকোলাস পাড়ায় জনপ্রতি ১৫০ টাকা ভাড়া রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
থানচি হোটেল ও কটেজ
মেঘবতী রিসোর্টঃ যোগাযোগ ০১৮৮১১৪১৪৮১, ০১৭১৬০০৯৯৬৫
জেলা পরিষদ রেস্ট হাউসঃ থানচি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাক
যোগাযোগ – ০১৮২৩০৫২১০০, ০১৬৩৭১০৯২৩৫
তাজিং ডং রিসোর্টঃ থানচি বাজার বিজিবি চেক পোস্ট সংলগ্ন এলাকা
যোগাযোগ – ০১৬০৯৫১৪১৮৬, ০১৮৬৪৪২৯৭৯১
সেগুন ঝিড়ি গেস্ট হাউসঃ সেগুন ঝিড়ি সংলগ্ন এলাকা
যোগাযোগ – ০১৮১৮০৯৪৪৪২, ০১৮৪৪৮৮৬৬০৬, ০১৫৬৬০০৩১৪৮
মায়া গেস্ট হাউসঃ সেগুন ঝিড়ি ঝুলন্ত ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা
যোগাযোগ – ০১৮১৯৫৩৭৭৫৩
সিং গেষ্ট হাউসঃ থানচি বাস স্টেশন সংলগ্ন , মুক্ত মঞ্চের পিছনে
যোগাযোগ – ০১৮২০৪০৪৬৫২, ০১৫৫৪৭২০৩১৪
থানচি কুটিরঃ থানচি থানা সংলগ্ন পার্শ্বোক্ত এলাকা
যোগাযোগ – ০১৮৪১১৩১১৭৭
দি হোটেল ডিসকভারি থানচিঃ প্রধান সড়ক, থানচি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থানচি বাজার, থানচি
যোগাযোগ – ০১৮৮০০০৬৩৫৮ ০১৮৮০০০৬৩৫৪
রেমাক্রি হোটেল ও কটেজ
শীলগিরি গেস্ট হাউসঃ রেমাক্রিমুখ, তিন্দু, থানচি
যোগাযোগ – ০১৮১৫১৯৯৫৩৯
খাবেন কোথায়
থানচি বাজারে মোটামুটি মানের খাওয়ার বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। কোন একটায় খেয়ে নিতে পারবেন। রেমাক্রিতে, নাফাখুম পাড়া, জিন্নাহপাড়ায় আদিবাসী বাড়িতেই খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আগে থেকে বলে রাখতে হবে। অনেকটা প্যাকেজ সিস্টেমে খাওয়ার ব্যবস্থা। সাধারণত ভাত, ভর্তা, ভাজি ও ডিম খেতে খরচ হবে ৮০ টাকা, ডিমের বদলে মুরগি খেতে চাইলে খরচ হবে ১২০ টাকা। আগে থেকেই গাইডকে দিয়ে জানিয়ে রাখতে হবে কি খাবেন ও কতজন খাবেন।
আরও পড়ুনঃ সুন্দরবন ভ্রমণ গাইড
আমিয়াখুম জলপ্রপাত ট্যুর প্ল্যান
যেখানেই থাকেন চেষ্টা করবেন সকালেই বান্দরবান চলে আসার। ঢাকা থেকে রাত ৯-১০ টার বাসে রওনা দিয়ে সকালে বান্দরবান। বান্দরবান সময় নষ্ট না করে সেখান থেকে লোকাল বাস বা জীপে করে থানচি চলে যাওয়া। অনুমতি ও অন্যান্য কাজ সেরে নৌকায় করে রেমাক্রী বাজার চলে যাওয়া। রাতে রেমাক্রি বাজার থেকে পরদিন সকালে নাফাখুম জলপ্রপাত ঘুরে বিকেলের মাঝে জিন্নাহপাড়ায় চলে আসতে হবে। রাত্রে জিন্নাহপাড়া থেকে পরের দিন সকালে আমিয়াখুম যেতে হবে। আমিয়াখুম ঘুরা ঘুরির পর সন্ধার মাঝে আবার নাফাখুম পাড়ায় ফিরে আসতে হবে। সকালে নাফাখুম ঘুরা ঘুরির পর আবার দুপুরের মাঝে থানচিতে ফিরে আসতে হবে। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বান্দরবানের উদ্দেশ্য রওনা দিতে হবে। তারপর রাতের বাসে ঢাকা ফিরে যেতে পারবেন।
কম খরচে আমিয়াখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ
আমিয়াখুম নাফাখুম ভ্রমণে মূলত খরচ বেশি হয় যাতায়তে। কম খরচে আমিয়াখুম জলপ্রপাত ভ্রমনে যেতে চাইলে সবচেয়ে ভালো হয় ৪, ৯ বা ১৪ জন সদস্যের দল। এতে করে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে নন এসি বাসে বান্দরবান, বান্দরবান থেকে বাসে করে থানচি এবং একই ভাবে ফিরে আসলে খরচ অনেক কম হবে। নিচে ৪ জন সদস্যের গ্রুপের জন্যে এক রাত দুইদিনের খরচের তালিকা দেওয়া হলো যা দেখে খরচের ব্যপারে কিছুটা ধারণা নিতে পারেন।
আমিয়খুম নাফাখুম জলপ্রপাত যাতায়াত খরচ
ঢাকা থেকে বান্দরবান : নন এসি বাস যাওয়া ও আসা ভাড়া জনপ্রতি ৬২০+৬২০ টাকা।
বান্দরবান থেকে থানচি : লোকাল বাস যাওয়া ও আসা ভাড়া জনপ্রতি ২০০+২০০ টাকা।
থানচি থেকে রেমাক্রি : ট্রলার ৫ জনের (গাইডসহ) যাওয়া ও পরদিন আসা সহ ভাড়া ৬০০০ থেকে ৭০০০ টাকা।
আমিয়াখুম নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণে খাওয়ার খরচ
সকালের নাস্তা : তিন দিনের সকালের নাস্তা খরচ জনপ্রতি ৩০০ টাকা।
দুপুরের খাবার : দুই দিনের দুপুরের খাবার(থানচি + রেমাক্রি) জনপ্রতি ৩০০ টাকা।
রাতের খাবার : তিন দিন (রেমাক্রি + আমিয়াখুম + বান্দরবান) রাতের খাবার খরচ জনপ্রতি ৬০০ টাকা।
ড্রাই ফুড : ট্রেকিং ও অন্যান্য সময় খাওয়ার জন্যে খরচ জনপ্রতি ২০০ টাকা।
আমিয়াখুম থাকার খরচ : জিন্নাপাড়ায় থাকার খরচ প্রতি রাত জনপ্রতি ১৫০ টাকা।
গাইড খরচ : সর্বমোট ৫,০০০ টাকা (থানচি + রেমাক্রি + নাফাখুম + আমিয়াখুম গাইড)।
আর বাসে যাতায়াত করলে অবশ্যই বান্দরবান বা থানচি থেকে শেষ বাস কয়টায় এই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। থানচি থেকে বান্দরবান আসার শেষ বাস বিকেল ৩ টায়। তাই বাসে বান্দরবান ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে ৩টার আগেই থানচি বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হবে।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
আমিয়াখুম ভ্রমণে যাবার পথে দেখতে পাবেন চিম্বুক, নীলগিরি, থানচি, সাঙ্গু নদী, পদ্মমুখ, তিন্দু, রাজাপাথর, রেমাক্রি ফলস ও রেমাক্রি পাড়া নাফাখুম, জিন্নাহপাড়া, তুইছাপাড়া, দেবতা পাহাড়, ভেলাখুম, সাতভাইখুম। এছাড়া আশেপাশের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে ডিম পাহাড়, আলীকদম, বগালেক, কেওক্রাডং, নীলাচল ও স্বর্ণমন্দির সহ আরও অনেক জায়গা।
আমিয়াখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- খরচ কমাতে চাইলে গ্রুপে ভ্রমণ করুন, ছুটির দিন পরিহার করতে পারেন।
- বর্ষায় আমিয়াখুম গেলে অবশ্যই সাথে লাইফ জ্যাকেট নিবেন।
- ট্রেকিং এর জন্যে অবশই ভালো গ্রিপের জুতা ব্যবহার করতে হবে।
- পাথুরে পথ অনেক পিচ্ছিল, হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন যেন পা পিছলে না যায়।
- আমিয়াখুম জলপ্রপাতের চারপাশে পাথুরে দেয়াল অনেক পিচ্ছিল, সাবধানে হাটাচলা করতে হবে।
- জলপ্রপাতের নিচে অনেক গভীর ও পাথর রয়েছ, উপর থেকে লাফ দিবেন না।
- ট্রেকিং এর সময় বাঁশের লাঠি সাথে রাখুন, হাঁটতে অনেক সুবিধা হবে।
- থানচির পর মোবাইল নেটওয়ার্ক তেমন কাজ করে না। তাই মোবাইলে কথা বলার থাকলে থানচি থাকা কালিন শেরে নিন।
- থানচির পর বিদুৎ এর ব্যবস্থা নেই, আগে থেকেই ক্যামেরা মোবাইল ভালো করে চার্জ দিয়ে নিন, আর সাতে পাওয়ার ব্যাংক রাখতে পারেন।
- অবশই সাথে ফার্স্ট এইড কিট বক্স রাখুন।
- ট্রেইলে হাঁটার সময় অবশই সাথে পানির বোতল রাখুন।