বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ভ্রমণ গাইড (Bangabandhu Safari Park)
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক (Bangabandhu Safari Park) গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে অবস্থিত। ঢাকা – ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাফারী পার্ক এর প্রবেশ দ্বার। প্রায় ৩,৬৯০ একর জায়গা জুড়ে খন্ড খন্ড শালবন ও ছোট ছোট টিলা নিয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক (Bangabandhu Safari Park)। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ডের সাফারী ওয়ার্ল্ডের অনুকরণে তৈরি সাফারী পার্ক চালু করা হয়।
এই সাফারি পার্কের অন্যতম আকর্ষণ পার্কের মূল প্রবেশ দ্বারের ভিতরে চারপাশে উন্মুক্ত বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, বন্য হরিণ ও অন্যান্য প্রাণী হেঁটে বেড়াচ্ছে আর তার মাঝ দিয়ে আপনি মিনিবাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হয়তো হঠাৎ সামনে থেকে কোন এক বাঘ রাস্তা আটকিয়ে দিলো অথবা জানালার পাশে এসে সিংহ গর্জন দিয়ে উঠলো। এমন অভিজ্ঞতা পেতে ঢাকা ও আশপাশ থেকে সারাদিন পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্যে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক (Bangabandhu Safari Park) হতে পারে আদর্শ জায়গা।
পুরো বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, কোর সাফারি পার্ক, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, সাফারি কিংডম, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক নামক ৫ টি পৃথক পৃথক অংশ নিয়ে সাজানো হয়েছে ।
বঙ্গবন্ধু স্কয়ার
সাফারি পার্কের ৩৮ একর জায়গা উপর বঙ্গবন্ধু স্কয়ার তৈরি করা হয়েছে। পার্কিং এলাকা, বিনোদন উদ্যান ও প্রশাসনিক কাজের জন্য নির্মিত ভবনগুলো বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থান পেয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে আকর্ষণীয় ম্যুরাল ও মডেলে সজ্জিত পার্কের প্রধান ফটক, ফোয়ারা ও লেক। প্রশাসনিক ভবনগুলোর পাশাপাশি এখানে রয়েছে ডিসপ্লে ম্যাপ, তথ্যকেন্দ্র, পার্ক অফিস, ডরমেটরি, বিশ্রামাগার, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, ইকো-রিসোর্ট ইত্যাদি।
কোর সাফারি
১২১৭ একর জায়গা জুড়ে গঠিত কোর সাফারি অংশে গাড়ি ছাড়া পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ন নিষেধ। তবে দর্শনার্থীদের জন্য এখানে দুটি জিপ ও দুটি মিনিবাস বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। যে কেউ নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে গাড়ি বা জিপে করে প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা বিভিন্ন বন্য প্রাণী দেখতে পারবেন। এখানে বাঘ, সিংহ, আফ্রিকান চিতা, কালো ভাল্লুক, চিত্রা হরিণ, সাম্বার, গয়াল, হাতি, মায়া ও প্যারা হরিণ ছাড়াও অনেক বন্য প্রাণীকে খোলা পরিবেশে ঘুরতে দেখা যাবে।
সাফারি কিংডম
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক (Bangabandhu Safari Park) এর ৫৫৬ একর জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে সাফারি কিংডম। সাফারি কিংডমের শুরুতে রয়েছে ম্যাকাও ল্যান্ড, এখানে আফ্রিকা থেকে আনা প্রায় ৩৪ প্রজাতির ম্যাকাও ও বিভিন্ন রকম পাখি রয়েছে। ম্যাকাও ল্যান্ডের পাশে রয়েছে প্রায় ২০ প্রজাতির মাছের মেরিন অ্যাকুরিয়াম। যার মধ্যে ক্রোকোডিল ফিস, টাইগার ফিস, অস্কার, ব্ল্যাক গোস এবং ২০ সেকেন্ড অন্তর অন্তর রং পরিবর্তন কারী চিকলেট মাছ উল্লেখযোগ্য।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক-এর আকর্ষন বাড়িয়েছে বিশাল আকারের সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ ও টাইগার রেস্তোরাঁ। এই রেস্তোরাঁয় বসেই কাচের অন্য পাশে সিংহ কিংবা বাঘের ঘুরোঘুড়ি দেখতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এশিয়া বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্রকায় ঘোড়া, আল পাকা, মান্ডারিং ডাক, ওয়ালাবি, ক্রাউন ক্রেইন ইত্যাদি।
এছাড়াও সাফারি কিংডমে র্যেছে তিনটি পাখিশালা, প্রজাপতি সাফারি, ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন, অর্কিড হাউজ, জিরাফ ফিডিং স্পট, শকুন ও পেঁচা কর্নার, এগ ওয়ার্ল্ড, বোটিং, লেইক জোন, আইল্যান্ড ও প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র দেখতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রবেশ ও অন্যান্য খরচ
সাফারি পার্ক প্রবেশ
সকল বাংলাদেশিদের জন্য পার্কে প্রবেশ টিকেট মূল্য ৫০ টাকা তবে ১৮ বছরের নিচে ছেলেমেয়েরা ২০ টাকা। আর সাধারণ অথবা শিক্ষা সফরে আসা ছাত্রছাত্রীদের পার্কে প্রবেশ করতে ১০ টাকা দিতে হয়। বিদেশী পর্যটকদের জন্য পার্কে প্রবেশ মূল্য ৫ ডলার।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে আগতদের জন্যে রয়েছে স্পেশাল প্রবেশ ফি। যদি শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ৪০-১০০ জন হয় তাহলে সকলের প্রবেশ ফি এক সাথে ৪০০ টাকা। যদি শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০ এর বেশি হয় তাহলে প্রবেশ ফি ৮০০ টাকা লাগবে।
কোর সাফারি পার্ক প্রবেশ ফি
কোর সাফারি পার্কে খোলা পরিবেশে জীব জন্তু ঘুরে বেড়ায় তার মাঝ দিয়ে জীপ ও মিনিবাসে ঘুরে দেখতে জনপ্রতি ১০০ টাকা প্রদান করতে হয়। ১৮ বছরের কম বয়সী এবং ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। মিনিবাসে করে ২০ মিনিট ঘুরিয়ে দেখাবে।
পার্কের অন্যান্য জায়গাতে প্রবেশ করতেও টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হয়। সব গুলো স্পট দেখতে মোটামুটি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাগবে। একসাথে কয়েকটি স্পট দেখার প্যাকেজ ও রয়েছে। এছাড়া প্যাডেল বোটে ৩০ মিনট ঘুরে দেখতে জনপ্রতি ২০০ টাকা খরচ হবে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাড়ি পার্কিং ভাড়া
প্রতিটি বাস, ট্রাক এর পার্কিং ভাড়া ২০০ টাকা। মাইক্রোবাস বা মিনি বাসের পার্কিং ভাড়া ১০০ টাকা। জিপ, প্রাইভেট কার, অটোরিক্সা বা সিএনজির পার্কিং ভাড়া ৬০ টাকা।
(সময় ভেদে সকল ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে)
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পরিদর্শনের সময়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক শুধু মঙ্গলবার ব্যতিত সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক বন্ধ থাকে। সম্পূর্ণ পার্ক ঘুরে দেখতে চাইলে সারাদিন চলে যাবে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় সকাল সকাল চলে যাওয়া। তাহলে সারাদিনে পার্কের সকল অংশ ঘুরে দেখতে পারবেন।
যোগাযোগ
বন সংরক্ষক
বন্য প্রানী ও প্রক্তি সংরক্ষক অঞ্চল
বন ভবন, আগারগাও, ঢাকা
মোবাইল: +88-01727-329816
পিকনিক, স্পট বুকিং ও যে কোন প্রয়োজনে: 01973-000044, 01823-000044, 01823-004484
ওয়েবসাইট: safariparkgazipur.info.bd
সাফারি পার্ক কি ভাবে যাবেন
ঢাকার মহাখালী থেকে শ্রীপুর, ভালুকা কিংবা ময়মনসিংহ গামী যে কোন বাসে গাজীপুরের চৌরাস্তা অতিক্রম করে বাঘের বাজারে সাফারি পার্কের বিশাল সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন। বাঘের বাজার থেকে ২০ থেকে ৪০ টাকা ভাড়ায় রিকশা বা অটোরিকশা দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক যাতে পারবেন।