গজনী অবকাশ কেন্দ্র

পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

গজনী অবকাশ কেন্দ্র বাংলাদেশের শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। প্রায় ৯০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃতে এই অবকাশ কেন্দ্রটি।  এটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের প্রধান এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।  এর উত্তরে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। গজনী অবকাশ কেন্দ্রে চোখে পড়বে সারি সারি  সবুজ শাল ও সেগুন গাছ, লতাপাতার বিন্যাস, ছোট-বড় টিলা, উপজাতীয়দের ঘরবাড়ি ইত্যাদি। এখানে স্থাপন করা হয়েছে বিশালাকার ডায়নোসর, ড্রাগন, জিরাফ, মৎস্যকন্যা, হাতির প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্য। এছাড়া এখানে রয়েছে  আলোকের ঝর্ণাধারা, পাতালপুরী, পদ্ম সিঁড়ি শিশুদের জন্য চুকোলুপি পার্ক, স্মৃতিসৌধ ছোট আকারের চিড়িয়াখানা, একুয়ারিয়াম ইত্যাদি। এখানকার চিড়িয়াখানায় রয়েছে অজগর সাপ, মেছো বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ সহ প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী। গজনী অবকাশ কেন্দ্রের আশেপেশে পাহাড়ী ঝর্ণা, লেক, টিলা, ছড়ার স্বচ্ছ জল ও ঘন সবুজ বন এখানকার পরিবেশকে দিয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

এখানে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পাহাড়ী ঝর্ণার গতিপথে বাধ দিয়ে  তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। কৃত্রিম লেকের শান্ত জলে নৌ বিহারের জন্য রয়েছে ময়ুরপঙ্খী নৌকা ও সীমান্ত প্যাডেল বোট। লেকের মাঝে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম পাহাড় ও লেক ভিউ পেন্টাগন, যা একটি দোদ্দুল্যমান ব্রীজ দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।  এখানে রয়েছে ৬৪ ফুট উঁচু সাইট ভিউ টাওয়ার, ঝুলন্ত ব্রীজ, ক্যাবল কার ও জিপ লাইনিং রাইড। ক্যাবল কারে উঠে কৃত্রিম জলপ্রপাতের ওপর দিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাবার ব্যবস্থা আছে।  গারো পাহাড়ের চূড়ায় ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি আধুনিক রেষ্ট হাউজ আছে। রেষ্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে যাবার জন্য পদ্মাসিঁড়ি নামক একটি আঁকাবাঁকা সিঁড়িপথ রয়েছে । গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও খেলার মাঠ রয়েছে। পিকনিক করার জন্য এখানে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির নলকূপ, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং রান্নার ব্যাবস্থা 

গজনী অবকাশ কেন্দ্র প্রবেশ ফি

এই গজনী অবকাশ কেন্দ্রে জনপ্রতি প্রবেশ ফি ২০ টাকা, ওয়াচ টাওয়ারের টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। গজনী অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ী নিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে উপজেলা পরিষদ চেকপোষ্ট থেকে গেটপাস নিতে হয়। বাস ও ট্রাকের জন্য ৩০০ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও মেক্সি ১৫০ টাকা, জিপ, প্রাইভেট কার ১০০ টাকা এবং সিএনজির প্রবেশের জন্য ৫০ টাকা পার্কিং গেটপাস নিতে হয়। এই গেটপাস সীমান্তে বিজিবির নকশী ক্যাম্পে দেখাতে হয়। এছাড়াও পার্ক এবং বিভিন্ন রাইডে চড়তে চাইলে রাইডভেদে ৫ থেকে ৬০ টাকা মূল্যের টিকিট লাগে।  

আরও পড়ুনঃ মধুটিলা মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমণ গাইড

গজনী অবকাশ কেন্দ্র যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে প্রাইভেট কার, মাক্রোবাস, মিনিবাস কিংবা বাস রিজার্ভ নিয়ে সরাসরি গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে পারেন। এছাড়া মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে ড্রিমল্যান্ড, আনন্দ, তুরাগ ইত্যাদি বিভিন্ন বাস সার্ভিসের বাসে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়ায় শেরপুর আসতে পারবেন। তবে এই সব বাস যাত্রাপথে অনেক স্টপেজে থামে তাই ঝামেলা এড়াতে শুধুমাত্র ড্রিমল্যান্ড স্পেশাল বাসে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় এসি/নন-এসিতে যেতে পারবেন। মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে দুপুর ২ টায় শেরপুরের  উদ্দেশ্যে এসি বাস ছাড়ে।

শেরপুর থেকে সিএনজি অথবা পিকআপ ভ্যানে করে গজনী অবকাশ কেন্দ্রেে  চলে আসতে পারবেন। আবার শেরপুর শাপলা চত্বর থেকে নন্নী বাজার জনপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা সিএনজি ভাড়া এবং নন্নি বাজার থেকে  জনপ্রতি ১৫ টাকা সিএনজি ভাড়ায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে পারবেন। শেরপুর বাস স্ট্যান্ড নেমে জনপ্রতি ১০ টাকা অটো রিক্সা ভাড়ায় খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর আসতে হবে। শাপলা চত্বরে মধুটিলা ও গজনী যাওয়া অটো/সিএনজি রিজার্ভ পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য মধুটিলা ইকোপার্ক ও গজনী ঘুরে আসার অটো/সিএনজি ভাড়া ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। প্রতি অটোতে ৬/৭ জন উঠা যায়।

কোথায় থাকবেন

সাধারণত ঢাকা ও শেরপুর  আশপাশ থেকে দিনে এসে দিনেই মধুটিলা ইকোপার্ক দেখে ফিরে যেতে পারবেন। থাকতে চাইলে  শেরপুর জেলা শহরে বিভিন্ন মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও গেষ্ট হাউজে রয়েছে। এ সব হোটেলে  ১৫০ থেকে ৫০০ ভাড়াই থাকতে পারবেন। শেরপুরে হোটেল গুলর মধ্যে  সম্পদ, কাকলী , বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, ভবানী প্লাজা অন্যতম। এছাড়া শেরপুরে সার্কিট হাউজ,  সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, এটিআই এবং পল্লী বিদ্যুৎ এর পৃথক পৃথক রেষ্ট হাউজ রয়েছে।

ফোন নাম্বারঃ সার্কিট হাউজ – ০৯৩১-৬১২৪৫, কাকলী গেষ্ট হাউজ – ০১৯১৪৮৫৪৪৫০,  আরাফাত গেস্ট হাউজ – ০৯৩১ – ৬১২১৭, হোটেল সম্পদ – ০১৭১২৪২২১৪৫, হোটেল সাইদ – ০৯৩১-৬১৭৭৬, বর্ণালী গেস্ট হাউজ – ০৯৩১ – ৬১৫৭৫।

কোথায় খাবেন

নালিতাবাড়িতে বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। এ গুলর মধ্যে  সেহের মল্লিক, ভেট্টো রেস্টুরেন্ট ও হোটেল সৌদিয়া অন্যতম। এছাড়া শেরপুন জেলা শহরে  নিউ মার্কেট এলাকায় বিভিন্ন মানের বেশ কিছু খাবারের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট পাবেন।

শেরপুরের দর্শনীয় স্থান

শেরপুরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে মধুটিলা ইকোপার্ক, পানিহাটা-তারানি পাহাড়, মাইসাহেবা জামে মসজিদ, ও রাজার পাহাড় অন্যতম।


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন
error: Content is protected !!