যাদুকাটা নদী

পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

যাদুকাটা নদী বা জাদুকাটা নদী (Jadukata River) সুনামগঞ্জ জেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় সীমান্তের কোল ঘেসে বয়ে চলা আপুরূপ সুন্দর একটি নদী। এ নদীর গভীরতা ৮ মিটার এবং অববাহিকার আয়তন ১২৫ বর্গকিলোমিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। এই নদীতে সারা বছরই পানিপ্রবাহ থাকে। তবে সাধারণত স্বল্প বন্যায় নদীর দুকুল প্লাবিত হয়। বৈচিত্র্যময় ও মনোমুগ্ধকর রূপের কারণে পাহাড়ি যাদুকাটাকে দেশের অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত নদী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বর্ষায় যাদুকাটা পানিতে টইটম্বুর থাকলেও শুকনো মৌসুমে অন্য রূপ ধারণ করে। শুকনো মৌসুমে নদীর দুই কূলে জেগে ওঠা বিশাল বালি চরের বুক চিরে বয়ে চলে পানির প্রবাহ।

নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা, নদীতে বয়ে চলা স্বচ্ছ শীতল জলধারা ও নদীর পাড়ের ঘন সবুজ পাহাড় সারির মনোরম দৃশ্য সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে বারেক টিলা সংলগ্ন যাদুকাটা নদীতে কাছে দেখা যায়। এই মনোমুগ্ধকর অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে এখানে ছুটে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী ও পর্যটক। বছরের প্রায় সব সময় পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হয় যাদুকাটা নদীর তীর। দিন যতই যাচ্ছে বাড়ছে যাদুকাটা নদীর সৌন্দর্যপিপাসুর সংখ্যা।

যাদুকাটা নদীর তীরে যাবার উপায়

বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে আপনি যাদুকাটা নদী ভ্রমন করতে পারবেন। যাদুকাটা নদীর তীরে যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে আসতে হবে। ঢাকার মহাখালী, সায়দেবাদ, গাবতলী ও ফকিরাপুল থেকে এনা, হানিফ ও শ্যামলী পরিবহনের বাস নিয়মিত সুনামগঞ্জ রুটে যাতায়াত করে। নন-এসি এসব বাসে ভাড়া লাগবে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে সুনামগঞ্জ যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। শুকনো সময়ে সুনামগঞ্জ থেকে লাউড়েরগড় হয়ে অথবা তাহিরপুর হয়ে যাদুকাটা নদীর তীরে যাওয়া যায। আপনি যেভাবেই  যান সময় লাগবে প্রায় ২ঘন্টা। সারাদিনের জন্যে গাড়ি রিসার্ভ করলে যাদুকাটা নদী সহ আশেপাশের অন্যান্য জায়গাও ঘুরে দেখতে পারবেন। মোটরসাইকেলে ২জন যেতে পারবেন, সারাদিনের জন্যে ভাড়া লাগবে ১০০০-১৫০০ টাকা এবং সিএনজিতে ১৫০০-২০০০ টাকা। আপনি যদি খরচ কমাতে চান তাহলে সুনামগঞ্জ থেকে বাইকে বা সিএনজিতে লাউড়েরগড় পর্যন্ত গিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে যেতে পারবেন শিমুল বাগান। আর বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওর দেখার পাশাপাশি শিমুল বাগান সহ বাকি সব জায়গা নৌকায় অথবা স্প্রীডবোট নিয়েই ঘুরে দেখতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ বান্দরবানের সাঙ্গু নদী ভ্রমণ তথ্য

ঢাকা টু সুনামগঞ্জ বাস সার্ভিস 

এনা ট্রান্সপোর্ট মহাখালি কাউন্টার 01760-737650, ফকিরাপুল কাউন্টার  01869-802736, মীরপুর কাউন্টার 01869-802731, আব্দুল্লাহপুর কাউন্টার  01869-802729, সায়েদাবাদ কাউন্টার 01869-802738

শ্যামলী পরিবহন – ভাড়া ৫৫০ টাকা। গাবতলী কাউন্টার 01865-068925, আসাদগেট কাউন্টার  01714-619173, কল্যাণপুর কাউন্টার 01716-478951, সায়েদাবাদ কাউন্টার 02-7541336, ফকিরাপুল কাউন্টার 02-7193725

হানিফ এন্টারপ্রাইজ – ভাড়া ৫৫০ টাকা। কল্যণপুর কাউন্টার 01713-049540, শ্যামলী কাউন্টার  01713-402639, গাবতলী কাউন্টার 02-9012902, ফকিরাপুল কাউন্টার  02-7191512, সায়েদাবাদ কাউন্টার 01713-402673

মামুন এন্টারপ্রাইজ – ভাড়া ৬০০ টাকা। সায়েদাবাদ কাউন্টার 01711-337851, 01783-877560, ফকিরাপুল কাউন্টার 01783-877562, আব্দুল্লাহপুর কাউন্টার 01783-877563, গাবতলী কাউন্টার 01958-454238

থাকবেন যেখানে

যাদুকাটা নদীর তীরে কাছাকাছি থাকার মত ভালো কোন হোটেল নেই। যদি থাকতেই হয় তাহলে শিমুল বাগানের কাছে বাদাঘাট বাজারের আল মদিয়া হোটেল তুলনামূলক ভালো। ছাড়াও টেকেরঘাট নীলাদ্রী লেকের কাছে বড়ছড়া বাজারের হোটেল খন্দকার, হোটেল নিলাদ্রি অথবা মেঘালয়া গেস্ট হাউজে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায় রুম পাওয়া যায়। আপনি যদি ভালো পরিবেশে থাকতে চান তাহলে আপনাকে সুনামগঞ্জ শহরে থাকতে হবে। সেখানে আপনি ৮০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।

সুনামগঞ্জ আবাসিক হোটেল 

খন্দকার হোটেল – বড়ছড়া বাজার, টেকেরঘাট, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ। যোগাযোগ 01740-311810

হোটেল নিলাদ্রি – টেকেরঘাট, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ। যোগাযোগ 01737-601684 

হাওর বিলাস গেস্ট হউস – হাজিরপাড়া সুনামগঞ্জ। যোগাযোগ 01716-388439

নূরানী হোটেল – সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন স্টেশনে অবস্থিত। যোগাযোগ 0871-55346

ওমর হোটেল – সুনামগঞ্জ পৌরসভার স্টেশন রোডে অবস্থিত। যোগাযোগ 01746-863300

হোটেল প্যালেস – সুনামগঞ্জ পৌরসভাস্থ স্টেশন রোডে অবস্থিত। যোগাযোগ 0871-55341

মিজান হোটেল – সুনামগঞ্জ পৌরসভাস্থ জগন্নাথ মন্দিরের পাশে অবস্থিত। যোগাযোগ 01765-308848

সুরমা ভ্যালি রেসিডেন্সিয়াল রিসোর্ট – পুরাতন বাসস্টেন্ড, স্টেশন রোড, সুনামগঞ্জ। যোগাযোগ 01763-880028

রয়েল ইন – পুরাতন বাস স্টেন্ড, সুনামগঞ্জ। যোগাযোগ 01792-873355

সারপিনিয়া হোটেল – জগন্নাতবাড়ি রোড, সুনামগঞ্জ। যোগাযোগ 0871-55278

আরও পড়ুনঃ সোমেশ্বরী নদী বিরিশিরি দুর্গাপুর ভ্রমণ তথ্য 

খাবেন যেখানে

এখানে তেমন ভালো মানের হোটেল নেই। বারিক টিলার নিচে, লাউড়েরগর বাজার, বড়ছড়া বাজার ও বাদাঘাট বাজারে কিছু মোটামুটি মানের দেশীয় খাবার হোটেল আছে। খুব ভালো মানের খাবার আশা করা ঠিক হবে না। তবে স্থানীয় তাজা সবজী, হাওরের নানা রকম মাছ, ভর্তা ভাজির নানা পদের খাবারের স্বাদ খুব খারাপ হবেনা

যাদুকাটা নদীর আসেপাশে দর্শনীয় স্থান

যাদুকাটা নদীতে ঘুরতে যাওয়া ভ্রমনপিপাসুরা চাইলে সুনামগঞ্জ জেলার আরও কিছু দর্শনীয় স্থান একসাথেই ঘুরে দেখতে পারবেন। আপনার হাতে সময় থাকলে ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে পারবেন। একদিনে আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন বারিক টিলা,   শিমুল বাগান ও টেকেরঘাটের শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক)।

ভ্রমণ টিপস

  • দিনে দিনে ঘুরে আসতে চাইলে খুব ভোরে রওনা দিবেন।
  • যাদুকাটা নদীর খুব কাছেই শিমুল বাগান ও নিলাদ্রী লেক, সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
  • থাকতে চাইলে সব থেকে ভালো হবে বড়ছড়া বাজারে কারণ তাহলে সব কয়টা দর্শনীয় জায়গা সহজে ঘুরতে পারবেন।
  • বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করবেন না।
  • নদী থেকে পাথর ও বালি উত্তোলনের কারণে অনেক গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়, পানিতে নামলে সাবধান থাকবেন।
  • শুকনো মৌসুমে নদীতে হাটু পানি থাকে। কিন্তু বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে অনেক স্রোত থাকে।
  • স্থানীয় মানুষদের সাথে ভালো আচরণ করুন এবং প্রয়োজনে সাহায্য নিন।
  • পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন।
  • খরচ কমাতে চাইলে অফ সিজনে এবং গ্রুপ করে ভ্রমণ করুন।
  • ভাড়ার ক্ষেত্রে ভালো করে দরদাম করে নিবেন।

 


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!