তেঁতুলিয়া থেকে দৃষ্টিনন্দন কাঞ্চনজঙ্ঘা

পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড় (Panchagarh) যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (Kangchenjunga) দেখা যায়, যার উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার (২৮,১৬৯ ফুট)। পঞ্চগড় জেলার তিন দিকেই ভারতের প্রায় ২৮৮ কিলোমিটার সীমানা-প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এর উত্তর দিকেই ভারতের দার্জিলিং জেলা অবস্থিত। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে  রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো। এর নির্মাণ শৈলী অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। জানা যায়, কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। ডাকবাংলোটি জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। এর পাশাপাশি এখানে  তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ একটি পিকনিক স্পট নির্মাণ করেছে। ওই স্থান দুটি পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় সৌন্দর্যবর্ধনের বেশি ভূমিকা পালন করছে। মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্তসংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পট অবস্থিত। হেমন্ত ও শীতকালে ডাকবাংলোর বারান্দায় দাঁড়ালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

শীতের মেঘমুক্ত আকাশে তুষারশুভ্র পাহাড়ের চূড়া রোদে চিকচিক করে ওঠে আর ঠিক তখনই কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা মাউন্ট এভারেস্টের ১২৫ কি.মি. পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটা হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ।  তেঁতুলিয়া থেকে ভালো ভাবে দেখা যাবে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা (যার উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার বা ২৮,১৬৯ ফুট) ও এভারেষ্ট চূড়ার প্রাকৃতিক সুন্দর দৃশ্য যা সকাল, দুপুর, বিকেল ও রাতের বেলা বিভিন্ন রুপ ধারন করে। এছাড়া প্রকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা এই জেলাকে ঘিড়ে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় অনেক অরগানিক চা বাগান এবং পিকনিক র্কনার। তাইতো শীত এলেই প্রকৃতি প্রেমি ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা পাড়ি জমায় পঞ্চগড়ে আর উপভোগ করে মনমুগ্ধকর প্রকৃতি।  

কখন দেখা যায়?

সারা বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না। সাধারণত অক্টোবরের শুরু থেকে থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মেঘমুক্ত আকাশে দূরে বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়ের চূড়া দেখতে পাওয়া যায়। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় সৌন্দর্য দেখতে যেতে চাইলে আপনাকে উপরোক্ত সময়ের ভিতর যেতে হবে এবং ঐ সময় আকাশ মেঘমুক্ত ও পরিস্কার থাকলে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। 

পঞ্চগড়ের কোন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালো দেখা যায় 

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাকবাংলো, বাংলাবান্ধা, তেঁতুলিয়া বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতুসহ বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গা থেকে খুব সকালে মেঘ এবং কুয়াশামুক্ত নীল আকাশে খালি চোখেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য। এছাড়া পঞ্চগড়ের ভিতরগর এলাকা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যায়। 

আরও পড়ুনঃ স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট ভ্রমণ গাইড

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে হানিফ বাসে করে সরাসরি তেঁতুলিয়া যাওয়া যায়। নন এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ১,১৫০ টাকা। এছাড়া পঞ্চগড় হয়েও তেতুলিয়া যেতে পারবেন।

ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইস, নাবিল পরিবহন, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এ পঞ্চগড় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া  জনপ্রতি ৯০০ থেকে ১,১০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া জনপ্রতি ১,৩০০ থেকে ১,৯০০ টাকা।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা ট্রেনে পঞ্চগড় আসতে পারেন। শ্রেণীভেদে ট্রেন টিকেটের মুল্য জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১৯৪২ টাকা।

পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ায় রোডে সারাদিন নিয়মিত বিরতিতে লোকাল বাস চলাচল করে। এসব বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন এবং চৌরঙ্গী মোড় থেকে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার জন্য প্রাইভেট কার ও মাইক্রো ভাড়া পাওয়া যায়। প্রাইভেট কার ও মাইক্রো রিজার্ভ করতে আনুমানিক ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা ভাড়া লাগবে।  

কোথায় থাকবেন

তেতুলিয়ায় কাজী ব্রাদার্স হোটেল ও সীমান্তের পাড় নামে দুইটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে নন এসি রুম ভাড়া ৬০০-৮০০ টাকা ও এসি ডাবল বেডের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা।

মহানন্দা নদী তীরের ডাকবাংলোতে থাকতে চাইলে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। ডাকবাংলোর প্রতি কক্ষের ভাড়া ৪০০ টাকা। বন বিভাগের রেস্টহাউস এবং বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষ্যে থাকতে পারবেন।

এছাড়া পঞ্চগড়ের সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় নন-এসি কক্ষে থাকতে পারবেন। ১০০০-১৫০০ টাকায় এসি কক্ষ ভাড়া করতে পারবেন।

তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদী তীরের ডাকবাংলোতে থাকতে চাইলে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দুই বেডের প্রতি কক্ষের ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা। ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার 01751026225 বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার জন্য জেলা সদর অথবা তেঁতুলিয়ায় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো রয়েছে, এখানে থাকার অনুমতি নিতে হবে পঞ্চগড় থেকে। এখানে প্রতি কক্ষের ভাড়া ২০০ টাকা।

এছাড়াও তেতুলিয়াতে ডিসি বাংলোতে থাকার ব্যবস্তা রয়েছে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন, সিমান্ত পার (08670-149431), কাজী ব্রাদার্স আবাসিক হোটেল রয়েছে।

পঞ্চগড়ে থাকার জন্য মধ্যম মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। এরকম কয়েকটি হচ্ছে পঞ্চগড়ের সিনেমা হল রোডে সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ, তেতুলিয়া রোডে হোটেল মৌচাক (01720-689075), তেতুলিয়ায় চৌরাস্তা হতে বায়ে সীমান্তপাড় হোটেল। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এসি কক্ষ। 


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন
error: Content is protected !!