Site icon ভ্রমণপিপাসু

কচিখালী সমুদ্র সৈকত

কচিখালী সমুদ্র সৈকত

কচিখালী সমুদ্র সৈকত

পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা কচিখালী সমুদ্র সৈকত (Kochikhali Sea Beach)। এটি সুন্দরবনের কটকা নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি চমৎকার দর্শনীয় স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত কচিখালী সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি এখানে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এই সৈকতে যেতে হলে বঙ্গোপসাগরের মোহনার খরস্রোতা কটকা নদী ও সুন্দরবনের ভিতরের প্রায় ৩ কিলোমিটার বুনো দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। এই পথে প্রায়ই দেখা যায় হরিণের পাল, বন্য শুকর এবং বাঘের পায়ের ছাপ সহ অসংখ্য বন্য প্রাণী। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লুনা বন সুন্দরবনের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ছায়ায় বেষ্টিত এবং জল ও ডাঙ্গার নানা জীব বৈচিত্র্যের সমাহার এই সমুদ্র সৈকতকে আরো বেশি আকর্ষণীয় এবং মনোরম করে তুলেছে।

এডভেঞ্চারপ্রেমীদের ভ্রমণপিপাসুদের জন্য কচিখালী কচিখালী সমুদ্র সৈকত ও অভয়ারণ্যে প্রবেশের রাস্তাটি একটি আদর্শ জায়গা। নৌকা থেকে নেমে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় বনের গহীনে। কাঙ্ক্ষিত কচিখালী সমুদ্র সৈকতের অবস্থান বনের একদম শেষ সীমানায়। কেওড়া, সুন্দরী, পশুর, বাইন ও আমুর গাছ সহ নানা ধরনের বৃক্ষের রঙ্গিন ফুল ও ফলে সাজানো বনের প্রতিটি গাছে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। আর বনের উত্তর-পশ্চিম দিকে রয়েছে  বানর, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ,বন মোরগ, অজগর সাপসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বিচরণ। আবার মাঝে মাঝে এই বনে দেখা মিলে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও। 

এছাড়া কটকা নদীর মোহনায় কুমির, শুশুক ও ডলফিনের মতো জলজ প্রাণী দেখাও পাওয়া যায়। কচিখালী সমুদ্র সৈকতের লবনাক্ত জল কটকা নদীর সাথে গিয়ে মিশেছে। ম্যানগ্রোভ বন, ৪০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার, ফার্ন এবং চোখজুড়ানো সবুজের সমারোহ এবং সূর্যাস্তের অপূরূপ  দৃশ্য ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে কচিখালী সমুদ্র সৈকতের বুনো সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করে।

কচিখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ খরচ

অভয়ারণ্য এলাকায় দেশি পর্যটকদের প্রতিদিনের জন্য  জনপ্রতি ভ্রমণ ফি – ১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য – ৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটকদের জন্য  ভ্রমণ ফি – ৭০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী- ২০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১০০০ টাকা ও গবেষকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ৪০ টাকা। করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা।

সী প্লেনের/হেলিকপ্টার  জন্য এককালীন ৩০০০০ টাকা ফ্রি লাগে, নবায়ন করতে ১০০০০ টাকা ফি দিতে হয়। ১০০ ফুটের ঊর্ধ্বে লঞ্চের জন্য ১৫০০০ টাকা, নবায়ন ফি দিতে হয় চার হাজার টাকা। ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট লঞ্চের জন্য এককালীন ১০০০০ টাকা দিতে হয় আর নবায়ন ফি দিতে হয় ৩০০০ টাকা। ৫০ ফুটের নিচে নৌযানের জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকা ও এদের জন্য নবায়ন ফি লাগে আড়াই হাজার টাকা। সাধারণ ট্রলার ৩০০০  টাকা ফি-তে সুন্দরবন অবস্থান করতে পারে, এদের নবায়ন ফি – ১৫০০ টাকা। স্পিডবোটের জন্য ফি দিতে হয় ৫০০০ টাকা, নবায়ন করতে লাগে ২০০০ হাজার টাকা। জালিবোট যেগুলো ট্যুরিস্ট বোট হিসাবে খ্যাত সেগুলোর জন্য এককালীন ফি দিতে হয় ২০০০ টাকা ও নবায়ন ফি ১০০০ টাকা লাগে।

বন বিভাগের ভ্রমণ ফি ছাড়াও প্রতিদিন গাইডের জন্য ফি ৫০০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ডদের জন্য ফি ৩০০ টাকা, লঞ্চের ক্রুর জন্য ফি ৭০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা। ভিডিও ক্যামেরা দেশি পর্যটকদের জন্য ফি  ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ফি ৩০০ টাকা।

সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীদের ভ্রমণে ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি ফি –  ৫০ টাকা, নিবন্ধনকৃত ট্রলার ফি – ২০০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলারের ফি ৮০০ টাকা এবং প্রতিদিন অবস্থানের জন্য ট্রলারের ফি –২০০ টাকা।

আরও পড়ুনঃ সুন্দরবন ভ্রমণ তথ্য

কচিখালী সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাবেন

সুন্দরবন ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে কচিখালী সমুদ্র সৈকত একটি আকর্ষণীয় স্থান। আর লঞ্চ হচ্ছে কচিখালী যাওয়ার প্রধান বাহন। কটকা সমুদ্র সৈকত থেকে পুর্ব দিকে কচিখালি সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। তাই কচিখালি সমুদ্র সৈকত যাওয়ার জন্য কটকা হয়ে যাওয়া সব চেয়ে সহজ। 

একা কিংবা ৫-৬ জনের ছোট্ট গ্রুপের জন্য কচিখালি সমুদ্র সৈকত ঘুরতে যেতে খরচ  অনেক বেশি। এক্ষেত্রে সুন্দরবনে পরিচালিত বিভিন্ন ট্যুর এজেন্সির প্যাকেজে যেতে পারেন। ট্যুর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভ্রমণ, সুন্দরবন ট্যুর বাংলাদেশ, এভারগ্রীণ ট্রাভেল বাংলাদেশ, ট্রাভেল ডায়রী, ট্যুর ডট কম ডট বিড়ি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

যদি কোন ট্যুর এজেন্সির সাহায্য ছাড়াই নিজেরা সুন্দরবন ঘুরে আসতে চান তবে ঢাকার গাবতলী অথবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে পর্যটক পরিবহন (০১৭১১-১৩১০৭৮), মেঘনা পরিবহন (০১৭১৭-৩৮৮৫৫৩), সাকুরা পরিবহন (০১৭১১-০১০৪৫০) কিংবা সোহাগ পরিবহন (০১৭১৮-৬৭৯৩০২) এর বাসে বাগেরহাট চলে আসুন। চাইলে কমলাপুর থেকে ট্রেনের চড়ে খুলনা আসতে পারেন। খুলনা থেকে রুপসা কিংবা বাগেরহাটের মংলা বন্দর থেকে সুন্দরবন যাওয়ার লঞ্চ পাওয়া যায়। এছাড়া বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকেও সুন্দরবন যাওয়ার বিভিন্ন নৌযান ভাড়া পাওয়া যায়। 

কচিখালী সমুদ্র সৈকত কোথায় থাকবেন

অধিকাংশ পর্যটক  কটকা-কচিখালীতে রাত্রিযাপন করে থাকেন। আবার অনেকেই রাত্রি যাপন করার জন্য টুরিস্ট ভেসেল বা নৌযানকে বেছে নেন। সুন্দরবনের অভয়ারন্যে টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্ট হাউজ, হিরণ পয়েন্টের নীলকমলে বন বিভাগের রেস্ট হাউজ, মংলায় পর্যটন কর্পোরেশন হোটেলে ও পশুর বন্দরে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আগে থেকেই বন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে বুকিং দিতে হবে। এছাড়া সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কয়েকটি সাধারন মানের আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে চাইলে থাকতে পারবেন।  

কচিখালী সমুদ্র সৈকত কোথায় খাবেন

ট্যুর অপারেটদের প্যাকেজের মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে তাই খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। তবে আপনি চাইলে বন বিভাগের রেস্ট হাউজে পূর্ব যোগাযোগের ভিত্তিতে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন।

কচিখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের সতর্কতা


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন
Exit mobile version