এক অপরূপ, শান্ত, সুনিবিঢ় ও বৈচিত্রময় পাহাড়ি জনপদ নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা (Lengura) ইউনিয়ন। শুধু নৈসর্গিক সৌন্দর্যই নয়, মুক্তিযুদ্ধ, টঙ্ক ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নানা ইতিহাস-নিদর্শনও ছড়িয়ে রয়েছে এই লেঙ্গুরায়। গারোপাহাড় থেকে নেমে আসা এক চপলা-চঞ্চলা পাহাড়ি নদী গণেশ্বরী বয়ে গেছে লেঙ্গুরার পাশদিয়ে। তার উত্তর-পূর্বদিকে প্রকৃতির নিজ হাতে সাজানো গোছানো ভারতের মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়ের সারি যেন এক খণ্ড ঘন সবুজ অরণ্য। আর এর দক্ষিণ-পশ্চিমে ছোট ছোট টিলাসদৃশ বাংলাদেশ সীমান্ত। টিলার পাশ ঘেঁষে গারো, হাজং, হদি, কোচ প্রভৃতি ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস।
শুকনো মৌসুমে সূর্যের আলোতে নদীর বুকজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চিকচিক করে সিলিকা বালিরাশি। আর বালির পরতের (স্তরের) নিচ দিয়ে বয়ে চলে স্বচ্ছ জলের ধারা। এ যেন এক শান্ত, সুনিবিঢ়, বৈচিত্রময় ও অপরূপ পাহাড়ি জনপদ। শুধু নৈসর্গিক সৌন্দর্যই নয়, মুক্তিযুদ্ধ, টঙ্ক ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নানা ইতিহাস-নিদর্শনও ছড়িয়ে এখানে। বিচিত্র এ পাহাড়ি জনপদের নাম লেঙ্গুরা। বাংলাদেশের সীমান্ত ছুঁয়ে সারি সারি পাহাড়, টিলা, নদী, আদিবাসী জীবনধারা ও ইতিহাস সবকিছু মিলিয়ে লেঙ্গুরার নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় মত। তাই এ স্থানটি সম্পর্কে যে ক জন জানেন তারা শীতকালে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন লেঙ্গুরা জনপদে।
ইতিহাস
১৯৭১ সালের ২৬শে জুলাই বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে পাক বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে সাত জন বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন, ডা. আব্দুল আজিজ, ফজলুল হক, ইয়ার মামুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, নূরুজ্জামান, দ্বীজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস শহীদ। ২৭ শে জুলাই সন্ধ্যায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরদেহ লেঙ্গুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি নামক স্থানে ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে তাদের সমাহিত করা হয়, যা সাত শহীদের মাজার নামে পরিচিত
আশেপাশে কী দেখবেন
লেঙ্গুরা জায়গাটি বেশ সুন্দর। এখানে রয়েছে আদিবাসী গারো হাজং সম্প্রদায়ের বসবাস। ঘুরে দেখতে পারেন পুরো এলাকাটি। গনেশ্বরীর নদীর সাথেই বেশ কিছু টিলা রয়েছে সেখানে ঘুরে দেখতে পারেন। টিলার উপর থেকে দূরের মেঘালয়ের উঁচু উঁচু পাহাড় সারি দেখতে বেশ ভাল লাগবে। এছাড়া এই লেঙ্গুরা বাজারের কাছে গনেশ্বরীর উপর একটি ব্রিজ ও রাবার ডেম আছে, যা দেখতে বেশ সুন্দর।
আরও পড়ুনঃ কাপ্তাই লেক ভ্রমণ তথ্য
লেঙ্গুরা যাবার উপায়
ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে নেত্রকোনা জেলা শহরে এসে সেখান থেকে মোটরসাইকেল রিজার্ভ নিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে লেংগুরা বাজার পার হয়ে তারপর সাত শহীদের মাজারে যেতে পারবেন। নেত্রকোণা সদর থেকে লেংগুরা দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। আবার আপনি চাইলে নেত্রকোণার বিরিশিরি ভ্রমণ করে সেখান থেকেও লেঙ্গুরা যাওয়া যায়। বিরিশিরি থেকে লেংগুরার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। অথবা ঢাকার মহাখালী থেকে সরাসরি কমলাকান্দা যাওয়ার নাইট কোচ বাস আছে। কলমাকান্দা থেকে মোটরসাইকেল রিজার্ভ করে লেংগুরা হয়ে সাত শহীদের মাজার সহ গুরে দেখতে পারবেন অপরূপ, শান্ত, সুনিবিঢ় ও বৈচিত্রময় পাহাড়ি জনপদ লেংগুরা।
কোথায় খাবেন
এই অঞ্চলে এখনও তেমন ভালো মানের খাবারের হোটেল গড়ে উঠেনি। খেতে চাইলে লেঙ্গুরা বাজারে মোটামুটি মানের দেশীয় খাবারের কিছু হোটেল পাবেন। কমলাকান্দা বাজারেও বেশ কিছু দেশীয় খাবারের হোটেল রয়েছে।
থাকবেন কোথায়
এখানে থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে। আর থাকতে চাইলে চলে আসতে হবে নেত্রকোণা সদরে। নেত্রকোণা সদরে মোটামুটি মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে।
নেত্রকণা হোটেল ও রিসোর্ট
সাগর গেস্ট হাউজ – মালনী রোড, নেত্রকোণা। ফোন: ৬১৩০৪
হোটেল শাহজাহান – তেরীবাজার,নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা মোবাইল: ০১৭১১-০৫০৯০৮
প্রবাসী গেস্ট হাউজ – তেরীবাজার, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা মোবাইল: ০১৭৩২-১২৪৫৫৮
হোটেল সৌরভ – নাগড়া, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা মোবাইল: ০১৭১৭-২২৯৫৯৯
রিভারভিউ গেস্ট হাউজ – মালনী রোড, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা মোবাইল: ০১৭১১-৭৮৯৩৬৩
হোটেল আল নুর – ছোট বাজার, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা মোবাইল: ০১৯২৪-৮১২৪৯৫
হোটেল ইমরান ইন্টারন্যাশনাল – ছোটবাজার, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা ফোন: ৬১৭৮৩
নেত্রকোণা গেস্ট হাউজ – পুরাতন হাসপাতাল রোড, নেত্রকোণা সদর, নেত্রকোণা ফোন: ৬১৫৮৩
কলমাকান্দা দর্শনীয় স্থান
কলমাকান্দা দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে সাত শহীদের মাজার, লেঙ্গুরা এলাকার পাহাড়, লেঙ্গুরার শুটিং স্পট, পাঁচগাঁও, চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড় অন্যতম।