নিকলী হাওর

পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

নিকলী হাওর (Nikli Haor) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি ও জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। দ্বিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির বুকে ট্রলার, স্প্রীডবুট কিংবা নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ পেতে ঘুরে আসতে পারেন  নিকলী হাওর থেকে। নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ  জেলা সদর থেকে নিকলির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। দিগন্ত জুড়া  জলের বুকে  দ্বীপের মত ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলরাশি, জেলেদের মাছ ধররা  ব্যস্ততা, রাতারগুলের মত অর্ধ ডুবা ছোট জলাবন ও খাওয়ার জন্যে হাওরের সব ধরনের তাজা মাছ। এই সব কিছু মিলে এক দিনে ভ্রমনের জন্য  নিকলী হাওর (Nikli Haor) জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 

নিকলী হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বছরের যে কোন সময়  নিকলী হাওর ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে হাওরের রূপ এক এক সময় এক এক রকম। তবে  হাওরের সপূর্ণ সৌন্দর্য  দেখতে চাইলে আপনাকে বর্ষাকাল বা তার পর পর যেতে হবে। তাই নিকলী  হাওর (Nikli Haor) ভ্রমণের উপযুক্ত সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। তবে সেপ্টেম্বরে তুলনামূলকভাবে পানির পরিমান  অনেক কম থাকে। সাধারণত  বর্ষাকালেই ভ্রমন পিপাসু পর্যটকেরা মেতে উঠে  হাওর ভ্রমনে। 

নিকলী হাওর যাবার উপায়

নিকলী হাওর (Nikli Haor) ভ্রমণে যেতে হলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে।  ঢাকা ও  কিশোরগঞ্জ জেলার আশপাশ থেকে একদিনে নিকলী হাওর ঘুরে আসতে পারবেন । ঢাকা থেকে বাসে বা  ট্রেনে সহজে কিশোরগঞ্জ এসে  নিকলী হাওর যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে বাসে যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে আসতে চাইলে ঢাকার গোলাপবাগ ও মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে অনন্যা সুপার বাস সার্ভিসে আসতে হবে কিশোরগঞ্জে । প্রতিদিন ভোর ৬ টা  থেকে ১৫ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে আসে কিশোরগঞ্জে উদ্দেশ্যে। বাসের ভাড়া  নিবে জনপ্রতি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা। দিনে ঘুরে রাতের মধ্যে ফিরে আসতে  চাইলে আপনাকে অবশ্যই সকাল ৭টার আগেই বাসে রওনা দিতে হবে। বাসে আসলে সব থেকে ভাল হবে কিশোরগঞ্জ এর আগেই কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ড নেমে গেলে। ঢাকা থেকে কটিয়াদি আসতে সময় লাগে  ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা। সেখান থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বের নিকলী যেতে আপনাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায়  সিএনজি রিজার্ভ করতে হবে। আর যেতে সময় লাগবে প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা।

আরও পড়ুনঃ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণ গাইড

ট্রেনে যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে ট্রেনে গিয়ে একদিনে ঘুরে আসতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই আন্তঃনগর এগারো সিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনে আসতে হবে। এগারো সিন্ধুর প্রভাতী বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন কমলাপূর ষ্টেশন থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে বিমানবন্দর, টঙ্গী, নরসিংদী ও ভৈরব ষ্টেশন হয়ে কিশোরগঞ্জ আসে। শ্রেণী ভেদে ট্রেনের ভাড়া শোভন ১২৫ টাকা, শোভন চেয়ার  ১৫০ টাকা, প্রথম আসন ২০০ টাকা, প্রথম বার্থ ৩০০ টাকা,  স্নিগ্ধা  ২২৮ টাকা, এসি  ৩৪৫ টাকা, এসি বার্থ  ৫১৮ টাকা

যদি ট্রেনে আসেন তাহলে সব থেকে ভাল হয়  কিশোরগঞ্জ সদরে পোঁছার আগের ষ্টেশন গচিহাটা ষ্টেশনে নেমে গেলে। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে আসলে আপনি সকাল ১১ টার মধ্যেই গচিহাটা ষ্টেশনে চলে আসতে পারবেন। ষ্টেশন থেকে অটো  অথবা সিএনজি দিয়ে সহজেই চলে যেতে পারবেন ১৫ কিলোমিটার দূরের নিকলী বাজারে। অটোতে জনপ্রতি ৩৫ টাকা অথবা রিজার্ভ নিলে ২৫০-৩০০ টাকা ভাড়ায় নিকলী যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা। সিএনজি রিজার্ভ নিলে খরচ হবে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা আর সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট। তবে ঐ দিনই ফিরতে চাইলে যাবার পথে বাসে যেতে হবে।

ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী (আন্তঃনগর)

  • এগারসিন্ধুর গোধূলি(৭৪৯) – ছাড়ায় সময় ০৭ঃ১৫ পৌছানোর সময় ১১ঃ১৫ (বুধবার বন্ধ)
  • এগারসিন্ধুর প্রভাতী(৭৩৭) –  ছাড়ায় সময় ১৮ঃ৪০ পৌছানোর সময় ২২ঃ৪৫ (বুধবার বন্ধ)
  • কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস(৭৮১) –  ছাড়ায় সময় ১০ঃ৪৫ পৌছানোর সময় ১৫ঃ০০ (বুধবার বন্ধ) 

কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলী হাওর

জেলা শহর থেকে নিকলী হাওর চাইলে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশনে সংলগ্ন নিকলীগামী সিএনজি ষ্টেশনে চলে আসুন। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে নিকলীর দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। সিএনজি ষ্টেশন থেকে লোকালে বা রিজার্ভ নিয়ে  ১ ঘন্টা সময়ে নিকলী যাওয়া যায়। লোকালে যেতে জনপ্রতি ভাড়া  নিবে ৭০ টাকা আর সিএনজি রিজার্ভ নিতে চাইলে ভাড়া লাগবে  ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ।

ভৈরব থেকে নিকলী হাওর 

এছাড়া ভৈরব থেকেও লোকাল কিংবা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে নিকলী হাওর নিকলী হাওর (Nikli Haor) যাতে পারবেন। লোকালে যেতে জনপ্রতি ভাড়া নিবে ১২০ টাকা আর রিজার্ভ নিলে ৬০০ টাকা। ভৈরব থেকে সিএনজিতে নিকলী যেতে সময় লাগবে  দেড় থেকে দুই ঘন্টা।

গচিহাটা, কটিয়াদি বা কিশোরগঞ্জ যা পথেই নিকলী আসেন না কেন পথের দুইপাশের গ্রাম বাংলার দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবে। যতই নিকলীর কাছাকাছি যেতে থাকবেন চার পাশের সৌন্দর্য  ততই বারতে থাকবে। রাস্তার  দুপাশের সৌন্দর্য  দেখতে দেখতেই কখন যে নিকলী পৌঁছে যাবেন সেটা বুঝতেই পারবেন না।

কোথায় খাবেন

নিকলী এসে যেখানে নামবেন সেখানেই মোটামুটি মানের বেশ কিছু  খাবার হোটেল আছে। তার মধ্যে ক্যাফে ঢ, হোটেল সেতু উল্লেখযোগ্য। হাওরের তাজা মাছের বিভিন্ন পদ দিয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা মধ্যে ভরপেট খেয়ে নিতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের দার্জিলিং সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ গাইড

নিকলী হাওর ভ্রমন পরিকল্পনা

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইজিবাইকে বেড়ি বাঁধের শেষ প্রান্তে চলে আসুন। সেখানে ঘন্টা প্রতি নৌকা ঠিক করে হাওর ঘুরে দেখতে  পারবেন। ছোট নৌকা ভাড়া ঘন্টা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং একটু বড় নৌকা ভাড়া  ঘন্টা প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। বেশি সময়ের জন্যে নৌকা  ভাড়া করলে খরচ কিছুটা কম হবে। এক নৌকায় অনায়াসে ১০-৩০ জন পর্যন্ত ঘুরতে পারবেন।

আপনার হাতে কত সময় আছে সেই অনুজায় নৌকা ভাড়া করুন। চেষ্টা করুন অন্তত ৩ ঘন্টযা নৌকা দিয়ে ঘুরার জন্য। নৌকা দিয়ে হাওরে ভাসতে ভাসতে চারপাশের মন্মুগ্ধ রূপ দেখতে প্রথমেই চলে যেতে পারেন ছাতিরচর। সিলেটের রাতারগুলের মত অর্ধ ডুবা  জলাবনের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দু’চোখ জুড়িয়ে নেয়ার পাশাপাশি হাওরের  শীতল জলে গা ঢুবিয়ে শরীর শান্ত করে পারেন। তবে ভরা বর্ষায় হাওরে  পানি অনেক বেশি থাকায় গোসল করতে চাইলে সাথে করে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

জলাবনের সৌন্দর্য দেখার পর  আবার নৌকা নিয়ে চলে যেতে পারেন চর মনপুরায়। পানি বেশি হলে যদিও ডুবে যায় তবে কম থাকলে অর্ধ ভাসমান এই চরে ঘুরে আসতে পারেন। তারপর উন্মুক্ত হাওরে শেষ বিকেলের রঙিন  সূর্য্য দেখতে দেখতে পূনরায় নিকলী বেড়ি বাঁধে এসে বাড়ি ফেরার পথ ধরতে হবে।

থাকবেন কোথায়

কিশোরগঞ্জ নিকলী হাওর রাত্রি যাপন করার মত কোনো ভালো আবাসিক হোটেল নেই। তবে রাত্রি যাপন করতে চাইলে নতুন চালু হওয়া চেয়ারম্যান গেস্ট হাউজ অথবা উপজেলা ডাক বাংলো তে থাকতে পারবেন। এ ছাড়া  কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে গিয়ে সেখানে থাকতে পারবেন। আর আপনি  চাইলে নৌকায় বা ক্যাম্পিং করে রাত পার করে দিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টা মাথায় রেখে থাকতে হবে। 

কিশোরগঞ্জ নিকলী হাওর আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টঃ-  

  • হোটেল উজানভাটিঃ স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ। এখানে নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ২৩ টি, এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৮ টি, নন-এসি  ডাবল বেড রুম ০৬ টি,  এসি ডাবল বেড ‍রুম০৩ টি,  ডিলাক্স এসি রুম: ০৩ টি,  সুপার ডিলাক্স এসি রুম: ০২ টি। যোগাযোগ 01743-718718
  • রিভারভিউ হোটেলঃ স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ। এখানে নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ৭ টি, এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৯ টি, নন-এসি  ডাবল বেড রুম ০২ টি,  এসি সেমি ডিলাক্স ০২ টি,  ডিলাক্স এসি রুম: ০২ টি,  সুপার ডিলাক্স এসি রুম: ০২ টি। যোগাযোগ  01754-231267
  • ক্যাসেল সালাম ইনঃ বড়বাজার, কিশোরগঞ্জ। নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৫ টি,  এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৩ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০২ টি, এসি ডাবল বেড ‍রুম ০২ টি। যোগাযোগ 01719-287064 
  • নিরালা হোটেলঃ ঈশা খাঁ রোড, কিশোরগঞ্জ। নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ১২ টি,  নন-এসি ডাবল বেড রুম  ০৮ টি,  এসি ডাবল বেড ‍রুম ০২ টি। যোগাযোগ 01775-7245580, 1759-014554 
  • হোটেল পার্কঃ ঈশা খাঁ শপিং কমপ্লেক্স ( ৩য় তলা) রথখলা, কিশোরগঞ্জ। নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০২ টি,  এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০১ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম  ০৫ টি, নন-এসি ডাবল বেড ‍রুম ০২ টি, এসি ডিলাক্স রুম: ০১ টি। যোগাযোগ 01865-676239, 01911-237822
  • গাংচিল হোটেলঃস্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ। নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ১২ টি, এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০২ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০৪ টি, এসি ডাবল বেড ‍রুম ০২ টি। যোগাযোগ 01724245155
  • হোটেল রয়েল প্যালেসঃ এমএম শপিং কমপ্লেক্স গৌরাঙ্গ বাজার, কিশোরগঞ্জ। নন এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৪ টি, নন এসি ডাবল বেড রুম ০৮ টি, এসি ডাবল বেড ‍রুম ০৩ টি। যোগাযোগ 01742-591117, 01629-76453 

আশপাশের দর্শনীয় স্থান 

কিশোরগঞ্জ জেলার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনের মধ্যে আছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কিশোরগঞ্জ লেক পার্ক, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, বালিখলা বেড়িবাধ, মিঠামইন হাওর ও ইটনা হাওর ইত্যাদি।   


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!