নীলাচল বান্দরবান

পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

নীলাচল (Nilachal) বান্দরবান জেলায় অন্যতম দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে একটি। বান্দরবান জেলা শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ার পাহাড়চূড়ায় নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়চূড়ায় বান্দরবান জেলা প্রশাসনের তত্তাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে এই আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। নীলাচল থেকে চার পাশে যত দূর চোখ যায় সমুদ্রের ঢেউ এর মত সুধু পাহাড় সারি। এখানে পাহাড়ের সাথে নীল আকাশ আর সাদা মেঘের খেলার মনমুগ্ধকর দৃশ পর্যটকদের বিমোহিত করে সব সময়। তাই প্রকৃতির অফুরন্ত রূপ দেখতে প্রকৃতি প্রেমিক ভ্রমনপিপাসু পর্যটকেরা নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে পাড়ি জমায় সব সময়। 

নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র থেকে সমগ্র বান্দরবান শহর দেখা যায় পাখির চখে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দূরের কক্সবাজারর সমুদ্র সৈকতের অপুর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বর্ষা, শরৎ এবং হেমন্তে নীলাচলে হাতের কাছে ভেসে বেড়াই মেঘের ভেলা। পাহাড়ের উঁচু নিচু আঁকাবাঁকা রাস্তা প্রকৃতি প্রেমিক ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আকর্ষণ করে সবসময়। নীলাচলে গড়ে তুলা হয়েছে শুভ্রনীলা,‘ঝুলন্ত নীলা’, ‘নীহারিকা’ এবং ‘ভ্যালেন্টাইন পয়েন্ট’ নামে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় বিশ্রামাগার। কমপ্লেক্সের মাঝে বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা এবং বসার ব্যবস্থা রয়েছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যও ভিন্ন ভিন্ন রকম। একটি থেকে আরেকটি একেবারেই আলাদা ও স্বতন্ত্র। তাই আপনি যদি এক জন প্রকৃতি প্রেমি ভ্রমণপিপাসু হন পাহাড় আর মেঘের মিতালির অপরূপ প্রকৃতি উপভোগ করতে চান তাহলে ঘুরে আসতে পারেন বান্দরবানের নীলাচল থেকে। 

আরও পড়ুনঃ সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ তথ্য 

বান্দরবান যাওয়ার উপায়

দেশের অন্যান্য যেকোন জায়গা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম এসে, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে  পূরবি ও পূর্বাণী পরিবহনে বান্দরবান যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে বান্দারবান যেতে ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আর সময় লাগবে তিন ঘণ্টা।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ট্রেন

ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী (আন্তঃনগর)

মহানগর প্রভাতী (৭০৪) ছাড়ায় সময় ০৭ঃ৪৫ পৌছানোর সময়  ১৪ঃ০০ (প্রতিদিন)

মহানগর এক্সপ্রেস (৭২২) ছাড়ায় সময় ২১ঃ২০ পৌছানোর সময় ০৪ঃ৫০ (রবিবার  বন্ধ)

তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২) ছাড়ায় সময় ২৩ঃ৩০ পৌছানোর সময় ০৬ঃ২০ (প্রতিদিন)

সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৮) ছাড়ায় সময় ০৭ঃ০০ পৌছানোর সময় ১২ঃ১৫ (বুধবার বন্ধ)

ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের সময়সূচী (মেইল এক্সপ্রেস)

চট্টগ্রাম মেইল (০২) ছাড়ায় সময় ২২ঃ৩০ পৌছানোর সময় ০৭ঃ২৫ (প্রতিদিন)

কর্ণফুলী এক্সপ্রেস (৪) ছাড়ায় সময় ০৮ঃ৩০ পৌছানোর সময় ১৮ঃ০০ (প্রতিদিন)

চট্টলা এক্সপ্রেস (৬৪) ছাড়ায় সময় ১৩ঃ০০ পৌছানোর সময় ২০ঃ৫০ (মঙ্গলবার বন্ধ)

ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান যাবার উপায়

আর ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান পর্যন্ত বাস সার্ভিস আছে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি বাস সার্ভিস সরাসরি বান্দরবান যাতায়ত করে। জনপ্রতি ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া  চাইলে আপনি রেন্ট এ কারে করেও চট্রগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারবেন সে ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২,৫০০-৩,৫০০ টাকা। 

বাসের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন

  • ইউনিক পরিবহন (01963-622236)
  • শ্যামলী পরিবহন (02-7541336, 02-7541336)
  • হানিফ পরিবহন (01713-402673) 
  • ঈগল পরিবহন (01793-328045)
  • সৌদিয়া পরিবহন (01919-654926)
  • সেন্টমার্টিন পরিবহন (01762-691341)
  • দেশ ট্রাভেলস (01705- 430566) 
  • এস আলম পরিবহন (02-9002702)

আরও পড়ুনঃ নাফাখুম ভ্রমণ তথ্য

নীলাচল কোথায় থাকবেন

নীলাচলে থাকতে চাইলে নীলাচল স্কেপ রিসোর্টের তিনটি কটেজ রয়েছে। এই কটেজ থেকে একটি বেছে নিতে পারেন আপনার জন্য। প্রতিটি কটেজে দুইটি করে রুম আছে, প্রতি রুমের ভাড়া ৩০০০ টাকা। নীলাচলে থাকতে চাইলে আগে থেকেই কটেজ বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। এছাড়া নীলাচল বান্দরবান শহরের কাছে খুব কাছে বলেই আপনি বান্দরবান শহরের হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে থাকতে পারবেন। বান্দরবান থাকার জন্যে যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। 

বান্দরবান শহরের হোটেল ও রিসোর্ট

 হিল ভিউ হোটেল : বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই হোটেল হিল ভিউ। ভাড়া ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। যোগাযোগ – ০১৮২৮৮৬৬০০০। 

হোটেল হিলটন: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই হোটেল হিলটন। ভাড়া ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা। যোগাযোগ – ০১৭৪৭৬২৬১১১।

হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে অল্প দূরে হোটেল প্লাজা। ভাড়া ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা। যোগাযোগ – ০১৬৭৮০৬০২৭৩। 

রিভার ভিউ: শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান রিভার ভিউ। ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা। যোগাযোগ – ০১৫৫৮৭৯০৭৯৭

পর্যটন মোটেল: পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত পর্যটন মোটেল। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। যোগাযোগ – ০১৯৯১১৩৯০২৬। 

মনে রাখা ভালো কোন সময়ে যাচ্ছেন তার উপর ভাড়া নির্ভর করবে। সিজন (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারী) ও সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকের সমাগম বেশি হয় বলে ভাড়া কম বেশি হতে পারে। আর আপনি সিজন ও ছুটির দিনে যান তাহলে ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই হোটেল রুম বুকিং করে রাখতে পারেন। অফসিজনে গেলে ২০-৫০% ডিসকাউন্ট থাকে। এছাড়া অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে যেগুলোতে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় সহজেই রাত্রিযাপন করতে পারবেন। 

আরও পড়ুনঃ জাফলং ভ্রমণ তথ্য

কোথায় খাবেন

নীলাচল স্কেপ রিসোর্টে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। নীলাচলে ফরেস্ট হিল নামে শুধুমাত্র একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে, এছাড়া খাবারের তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনে বান্দরবান থেকে খাবার সাথে নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন কিংবা নীলাচল থেকে বান্দরবান শহরে ফিরে খাবার খেতে পারেন। বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্যে রয়েছে বিবিন্ন মানের বেশি কিছু রেস্তোরা, তার মধ্যে তাজিং ডং ক্যাফে, মেঘদূত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট, রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, রী সং সং, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি অন্যতম।

বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান

বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম চিম্বুক, নীলগিরি, স্বর্ণমন্দির থানচি, সাঙ্গু নদী, পদ্মমুখ, তিন্দু, রাজাপাথর, রেমাক্রি ফলস ও রেমাক্রি পাড়া, নাফাখুম, আমিয়াখুম, ভেলাখুম, ডিম পাহাড়, আলীকদম, বগালেক, কেওক্রাডং সহ আরও অনেক জায়গা।


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন
error: Content is protected !!