পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ
পাগলা মসজিদ (Pagla Masjid) বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম মসজিদ। এই মসজিদটি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত। এর পাঁচতলা বিশিষ্ট সুউচ্চ মিনারটি বহুদূর থেকে সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। পাগলা মসজিদের ইমরাত দৃষ্টি নন্দন এবং নির্মাণশৈলীও বেশ চমৎকার। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত। প্রচলিত আছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক সাধক নরসুন্দা নদীর বুকে মাদুরে ভেসে এসে অবস্থান নেন। ধীরে ধীরে তাঁকে ঘিরে ভক্তদের সমাগম হতে শুরু করে। আধ্যাত্মিক সাধকের মৃত্যুর পর তাঁর কবরের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যা বর্তমানে পাগলা মসজিদ নামে অত্যন্ত সুপরিচিত।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের বিশেষ আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রয়েছে। সকল ধর্মের মানুষের কাছে পাগলা মসজিদ এক সার্বজনীন পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র। মানুষজন মনে প্রানে বিশ্বাস করেন, যদি কেউ খাস ও সহী নিয়তে পাগলা মসজিদে কোন কিছু দান করে তাহলে তার মনের বাসনা পূর্ণ হয়। এমন বিশ্বাসের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন পাগলা মসজিদে প্রচুর দান-খয়রত করেন। আর অধিক দান-খয়রতের কারণে পাগলা মসজিদ ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান পেয়েছেন। এই মসজিদের আয়ের একটা অংশ অন্যান্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক খাতে এবং জটিল রোগীদের চিকিৎসায় এর অর্থ ব্যয় করা হয়। এছাড়া ২০০২ সালে মসজিদের পাশে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বর্তমানে লেকসিটি প্রকল্পের আওতায় পাগলা মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী খনন, দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ, মসজিদের শোভাবর্ধন এবং রঙিন আলোকসজ্জার জন্য দিনে ও রাতে মসজিদটি দেখতে চমৎকার ও আকর্ষণীয় লাগে।
পাগলা মসজিদ যাবার উপায়
দেশের যে জায়গা থেকে পাগলা মসজিদ আসতে চাইলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ জেলার আশপাশ থেকে একদিনে পাগলা মসজিদ ঘুরে আসতে পারবেন । ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে সহজে কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। কিশোরগঞ্জ শহরের যে কোন জায়গা থেকে সহজে রিকশা ও ইজিবাইকে পাগলা মসজিদ যেতে পারবেন।
পাগলা মসজিদ বাসে যাবার উপায় উপায়
ঢাকা থেকে বাসে আসতে চাইলে ঢাকার গোলাপবাগ ও মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে অনন্যা সুপার বাস সার্ভিসে আসতে হবে কিশোরগঞ্জে । প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে ১৫ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে আসে কিশোরগঞ্জে উদ্দেশ্যে। বাসের ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা। দিনে ঘুরে রাতের মধ্যে ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সকাল ৭টার আগেই বাসে রওনা দিতে হবে। কিশোরগঞ্জে বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল ১৫ টাকা ভাড়া বা রিসার্ভ ইজিবাইকে ১২০ টাকা ভাড়ায় চলে আসুন একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে।
পাগলা মসজিদ ট্রেনে যাবার উপায়
ট্রেনে ঢাকা থেকে গিয়ে একদিনে ঘুরে আসতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই আন্তঃনগর এগারো সিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনে আসতে হবে। এগারো সিন্ধুর প্রভাতী বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন কমলাপূর ষ্টেশন থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে বিমানবন্দর, টঙ্গী, নরসিংদী ও ভৈরব ষ্টেশন হয়ে কিশোরগঞ্জ আসে। শ্রেণী ভেদে ট্রেনের ভাড়া শোভন ১২৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০ টাকা, প্রথম আসন ২০০ টাকা, প্রথম বার্থ ৩০০ টাকা, স্নিগ্ধা ২২৮ টাকা, এসি ৩৪৫ টাকা, এসি বার্থ ৫১৮ টাকা
আরও পড়ুনঃ নিকলী হাওর ভ্রমণ গাইড
ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী (আন্তঃনগর)
- এগারসিন্ধুর গোধূলি(৭৪৯) – ছাড়ায় সময় ০৭ঃ১৫ পৌছানোর সময় ১১ঃ১৫ (বুধবার বন্ধ)
- এগারসিন্ধুর প্রভাতী(৭৩৭) – ছাড়ায় সময় ১৮ঃ৪০ পৌছানোর সময় ২২ঃ৪৫ (বুধবার বন্ধ)
- কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস(৭৮১) – ছাড়ায় সময় ১০ঃ৪৫ পৌছানোর সময় ১৫ঃ০০ (বুধবার বন্ধ)
খাবেন কোথায়
কিশোরগঞ্জ শহরে বিভিন্ন মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তার মধ্যে গাংচিল, তাজ, স্টার ওয়ান, ধানসিঁড়ি, ইস্টিকুটুম, দারুচিনি, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে অন্যতম। আর দয় মিষ্টি খেতে চাইলে একরামপুরের লক্ষী নারায়ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার কিংবা মদন গোপালে ঢু মারতে পারেন।
থাকার উপায়
রাত্রিযাপনের জন্য কিশোরগঞ্জ শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। শহরের স্টেশন রোডে গাংচিল, হোটেল শেরাটন, রিভার ভিউ, নিরালা, উজান ভাটি, ক্যাসেল সালাম সহ বেশকিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে সরকারি ডাক-বাংলোতে থাকতে পারবেন।
কিশোরগঞ্জ আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টঃ-
- হোটেল উজানভাটিঃ স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ। এখানে নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ২৩ টি, এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৮ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০৬ টি, এসি ডাবল বেড রুম০৩ টি, ডিলাক্স এসি রুম: ০৩ টি, সুপার ডিলাক্স এসি রুম: ০২ টি। যোগাযোগ 01743-718718
- রিভারভিউ হোটেলঃ স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ। এখানে নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ৭ টি, এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৯ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০২ টি, এসি সেমি ডিলাক্স ০২ টি, ডিলাক্স এসি রুম: ০২ টি, সুপার ডিলাক্স এসি রুম: ০২ টি। যোগাযোগ 01754-231267
- ক্যাসেল সালাম ইনঃ বড়বাজার, কিশোরগঞ্জ। নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৫ টি, এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৩ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০২ টি, এসি ডাবল বেড রুম ০২ টি। যোগাযোগ 01719-287064
- নিরালা হোটেলঃ ঈশা খাঁ রোড, কিশোরগঞ্জ। নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ১২ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০৮ টি, এসি ডাবল বেড রুম ০২ টি। যোগাযোগ 01775-7245580, 1759-014554
- হোটেল পার্কঃ ঈশা খাঁ শপিং কমপ্লেক্স ( ৩য় তলা) রথখলা, কিশোরগঞ্জ। নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০২ টি, এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০১ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০৫ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০২ টি, এসি ডিলাক্স রুম: ০১ টি। যোগাযোগ 01865-676239, 01911-237822
- গাংচিল হোটেলঃস্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ। নন-এসি সিঙ্গেল বেড রুম ১২ টি, এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০২ টি, নন-এসি ডাবল বেড রুম ০৪ টি, এসি ডাবল বেড রুম ০২ টি। যোগাযোগ 01724245155
- হোটেল রয়েল প্যালেসঃ এমএম শপিং কমপ্লেক্স গৌরাঙ্গ বাজার, কিশোরগঞ্জ। নন এসি সিঙ্গেল বেড রুম ০৪ টি, নন এসি ডাবল বেড রুম ০৮ টি, এসি ডাবল বেড রুম ০৩ টি। যোগাযোগ 01742-591117, 01629-76453
পাগলা মসজিদ আসেপাশের দর্শনীয় স্থান
কিশোরগঞ্জ জেলার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনের মধ্যে আছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কিশোরগঞ্জ লেক পার্ক, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, বালিখলা, মিঠামইন হাওর ও নিকলী হাওর ইত্যাদি।