রামসাগর দীঘি

পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

রামসাগর দীঘি (Ramsagar Dighi) দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে অবস্থিত। মানুষের খনন করা বাংলাদেশের সবচে বড় দীঘি রামসাগর। যার আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার। দীঘিটির পশ্চিম পাড়ের মধ্যখানে বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথর স্ল্যাব দ্বারা নির্মিত ঘাট ছিল। যার কিছু অবশিষ্ট এখনও রয়েছে।

উত্তরের কক্সবাজারখ্যাত দিনাজপুরের রামসাগরে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত দর্শনার্থী ভিড় কররেন মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে।  দিঘির পাড়ে আম, জাম, কাঁঠাল, আমলকী, হরীতকী, সেগুন দেবদারু, জারুল, কাঞ্চন, নাগেশ্বর, কাঁঠালিচাঁপা, বটসহ ১৫২ রকমের গাছ সহ হরেক রকমের ফুল গাছ রয়েছে । ১৯৬০ সালে রামসাগর দীঘি বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে নিয়ে যায়। ১৯৯৫ সালে রামসাগরকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে এবং ২০০১ সালে রামসাগরকে ঘিরে গড়ে ওঠা বন জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

রামসাগর দীঘির ইতিহাস 

১৭২২-১৭৬০ পর্যন্ত রাজা প্রাণনাথ দিনাজপুর শাসন করেন। পলাশীর যুদ্ধের কিছুকাল আগে রাজা প্রাণনাথ এই দিঘি খনন করিয়েছিলেন। তারই নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় রামসাগর। দিঘিটি খনন করতে তৎকালীন প্রায় ৩০,০০০ টাকা খরচ হয় এবং ১৫,০০,০০০ শ্রমিক কাজ করেন। 

এই দিঘি নিয়ে প্রচলিত আছে বিভিন্ন লোককথা। কথিত আছে, ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রচণ্ড এক খরা দেখা দেয়।  পানির অভাবে হাজার হাজার প্রজা মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে। এসময় দয়ালু রাজা প্রাণনাথ স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি পুকুর খনন করেন। মাত্র ১৫ দিনে এর খনন কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু সেই পুকুর থেকে পানি না ওঠায় একসময় রাজা স্বপ্নে দৈববাণী পেলেন যে, রাজা একমাত্র পুত্রকে বলি দিলে দীঘি পানিতে ভড়ে উঠবে। তখন রাজা প্রাণনাথ দীঘির মাঝখানে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করেন। 

আরও পড়ুনঃ স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট ভ্রমণ গাইড 

তারপর এক ভোরে রাজপুত্র রামনাথ সাদা পোষাকাচ্ছাদিত হয়ে হাতির পিঠে চড়ে যাত্রা শুরু করলেন সেই দীঘির দিকে। দীঘির পাড়ে পৌঁছে যুবরাজ রাম সিঁড়ি ধরে নেমে গেলেন মন্দিরে। সঙ্গে সঙ্গে দীঘির তলা থেকে অঝোর ধারায় পানি উঠতে লাগল। চোখের পলকে যুবরাজ রামনাথসহ পানিতে ভরে গেল বিশাল দীঘি। অপর লোককাহিনী অনুযায়ী দিঘি খনন করার পর রাজা রামনাথ পানি না উঠলে স্বপ্ন দেখেন রাজা দিঘিতে কেউ প্রাণ বিসর্জন দিলে পানি উঠবে। তখন রাম নামের স্থানীয় এক যুবক দিঘিতে প্রাণ বিসর্জন দেয়। পরবর্তিতে রাজার নির্দেশে সেই যুবকের নামে দিঘির নামকরণ করা হয় রামসাগর।

রামসাগর দীঘি কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাস করে সহজে দিনাজপুর যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছেড়ে যায়। বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে  – 

হানিফ এন্টারপ্রাইজ (8013714, 8015368),  শ্যামলী পরিবহন (900331),  নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস (02-8013793, 8019312), এস এ পরিবহন (9332052),কেয়া পরিবহন (9000812) ইত্যাদি। নন-এসি এবং এসি বাস ভাড়া মানভেদে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এছাড়া রাজধানীর উত্তরা থেকে কিছুসংখ্যক বাস দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। 

এস আর ট্রাভেলস –  প্রাইভেট লিমিটেড এর একটি নন এসি বাস ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে তার যাত্রা শুরু করে রাত 9 টা 10 মিনিটে এবং দিনাজপুর পৌছে সকাল 5 টা 10 মিনিটে।

নাবিল পরিবহন – এর একটি এসি বাস এই রুটে চলাচল করে। আপনারা যারা ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রাতে একটু আরামদায়কভাবে যাত্রা করতে চান তারা এই বাসটিতে আপনার যাত্রা সম্পন্ন করতে পারেন। এই বাসটি ঢাকা কাউন্টার থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে তার যাত্রা শুরু করবে রাত 9 টা 30 মিনিটে এবং দিনাজপুর কাউন্টারে পৌঁছাবে সকাল ছয়টায়। 

হানিফ এন্টারপ্রাইজ – এর সর্বশেষ একটি বাস সার্ভিস যেটা রাতের শেষভাগে ঢাকা কাউন্টার থেকে তার যাত্রা শুরু করে রাত 11:30 মিনিটে এবং সারারাত যাত্রা করার পর দিনাজপুর কাউন্টারে এসে পৌঁছায় সকাল 9:30 মিনিটে।

ট্রেনে ঢাকা থেকে সহজে দিনাজপুর যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। শ্রেনীভেদে এইসব ট্রেনের টিকেটের মূল্য শোভন 390 টাকা, শোভন চেয়ার 365 টাকা, প্রথম আসন 775 টাকা,  প্রথম বার্থ 620 টাকা, এসি আসন 930 টাকা, এসি বার্থ 1390 টাকা এবং স্নিগ্ধা 930 টাকা।

আরও পড়ুনঃ বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ভ্রমণ গাইড

ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেন ও সময় সূচী 

একতা এক্সপ্রেস (705) – ছাড়ার সময় ১০ঃ১০ পৌঁছানোর সময় ১৯ঃ০০ (বন্ধ নাই)

দ্রুতযান এক্সপ্রেস (757) – ছাড়ার সময় ২০ঃ০০ পৌঁছানোর সময় ০৪ঃ০০ (বন্ধ নাই) 

পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (793) -ছাড়ার সময় ২২ঃ৪৫ পৌঁছানোর সময় ০৬ঃ৩০(বন্ধ নাই)

দিনাজপুর থেকে  সিএনজি অথবা ইজিবাইক ভাড়া অথবা রিজার্ভ করে সহজেই রামসাগর দীঘি যেতে পারবেন।

রামসাগর দীঘি বা দিনাজপুরে কোথায় থাকবেন

দিনাজপুর শহরে থাকতে চাইলে পর্যটন মোটেলে (0531-64718) যোগাযোগ করতে পারেন। ঢাকা থেকে পর্যটনের হোটেলে বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন 9899288-91 নাম্বারে। পর্যটন মোটেলে ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকা ভাড়ায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এছাড়া দিনাজপুরের সাধারণ মানের হোটেলগুলিতে যোগাযোগ করতে পারেন। সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল নবীন (0531-64178), হোটেল ডায়মন্ড (0531-64629), নিউ হোটেল (0531-68122), হোটেল আল রশিদ (0531-64251), হোটেল রেহানা (0531-64414), ইত্যাদিতে ২০০ থেকে ১০০০ টাকায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন। 

দিনাজপুর জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান

দিনাজপুরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যমন্ডিত দিনাজপুর জেলা লিচু, আম ও চাল  উৎপাদনের জন্যে বিখ্যাত। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে রয়েছে স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট , কান্তজীর মন্দির, রাজবাড়ী, নয়াবাদ মসজিদ, লিচু বাগান ইত্যাদি।


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন
error: Content is protected !!