সিডনি
সিডনি (Sydney) অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন জনবহুল ও বড় শহর। এখানে প্রায় ৫০ লাক্ষ লোকের বসবাস। সিডনি কে প্রযুক্তির শহরও বলা হয়। অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় কম্পানির প্রধান কার্যালয় সিডনিতে অবস্থিত। গ্লোবালাইজেশনের যুগে জীবন জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যের মানুষ পাড়ি জমায় সিডনি শহরে। আর এজন্যই এই শহরকে গিরে আস্তে আস্তেে গড়ে উঠছে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। শহরের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে। এছাড়া এখানে রাস্তার পাশেও ফ্রি গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। বই নিয়ে পড়ে আবার ওইখানে ফেরত দেয়া যায়। সিডনি আউস্ত্রালিয়ার ব্যয়বহুল শহর। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকা প্রথম ৩০টির মধ্যে সিডনি একটি।
সিডনির দর্শনীয় স্থান
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে ঘুরে ভেড়ানোর জন্য আছে অনেক ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা। আপনার হাতের সময় ও আপনার আগ্রহ অনুযায়ী ঘুরে দেখতে পারেন দর্শনীয় স্থানগুলো। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে –
সিডনি অপেরা হাউস (Opera House) :
অস্ট্রেলিয়া (Australia) মানেই চোখের সামনে ভেসে উঠে পাল তোলা নৌকার মতো এক দৃষ্টিনন্দন দালানের ছবি যা অপেরা হাউস নামে পরিচিত। বিশ্বের কোটি কোটি পর্যটকদের আকর্ষণে সিডনির অপেরা হউস। এটি একটি স্থায়ী অবকাঠামোবিশেষ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বন্দরে অপেরা হউসের অবস্থান। এটি দেখতে অনেকটা নৌকার পাল আকৃতির মত। এই আইকনিক বিল্ডিং ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর একটি। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে। এই অপেরা হউসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। টিকিট কেটে অপেরা হাউসের বিতরে ঘুরার ব্যবস্থা রয়েছে।
সিডনি হারবার ব্রিজ (Sydney Harbour Bridge) :
সিডনির বিখ্যাত হারবার ব্রিজ পৃথিবী বিখ্যাত ব্রিজগুলোর মধ্যে অন্যতম। গিনেজ বিশ্বরেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের একক স্পানবিশিষ্ট সবচেয়ে প্রশস্ত দৃষ্টিনন্দন সেতু হলো সিডনি হারবার ব্রিজ। এই ব্রিজ থেকে প্রায় পুরো সিডনি শহরের একটি সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। ছবি তোলার জন্য হারবার ব্রিজ একটি আইকনিক স্থান। পায়ে হেটে ব্রিজের উপরে উঠার ব্যবস্থা রয়েছে। খুব ভোরে অথবা সন্ধ্যা বেলা ব্রিজের উপর থেকে পুরো শহরের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
ডার্লিং হারবার (Darling Harbour) :
ডার্লিং হারবার সিডনির টুরিস্ট হাব। এখান থেকে দেখা যায় নীল সাগর ও ব্যস্ততম শহরের চিত্র। সন্ধ্যায় আলোতে আলোতে উপভোগ করা যায় হারবারের মনোরম দৃশ্য। সিফুড রেস্টুরেন্টগুলোতে দেখা যায় শতশত মানুষের সমাগম।
বন্ডি বিচ (Bondi Beach) :
সিডনির নামকরা সমুদ্র সৈকত গুলোর মধ্যে বন্ডি বিচ একটি। এখানে সাদা বালি, শান্ত ঢেউ এবং অসংখ্য রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেের জন্য বন্ডি বিচ অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। গরমে সূর্যস্নান করতে বিপুল পরিমাণ পর্যটক এই বিচে ছুটে আসেন। সারাবছর বন্ডি বিচে পর্যটকদের ভিড় থাকে। তাই বন্ডি বিচে যেতে চাইলে সকাল সকাল যাওয়া ভালো।
রয়াল ন্যাশনাল পার্ক (Royal National Park) :
শহরের মাঝে প্রকৃতির এক অসাধারন নিদর্শন সিডনির রয়াল ন্যাশনাল পার্ক। ২৬ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে থাকা এই পার্কটি সিডনির জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এই পার্ক পরিদর্শনের জন্য কোন ফ্রি লাগেনা। পার্কটির অবস্থান সমুদ্রের পাশে হওয়ায় সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে রয়েছে ট্রেইল ওয়াক, হাইকিং, রক অভজারভেশন সহ নানারকম ব্যবস্থা।
রয়াল বোটানিক গার্ডেন (Royal Botanic Gardens) :
ন্যাশনাল পার্কের পর বিশাল জায়গা জুড়ে গড়ে তুলা হয় রয়াল বোটানিক গার্ডেন। এখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সবরকম গাছপালা ও উদ্ভিদ অতি যত্নে সহকারে সংরক্ষণ করা হয়।
কুইন ভিক্টোরিয়া বিল্ডিং (Queen Victoria Building) :
কুইন ভিক্টোরিয়া বিল্ডিং হলো সিডনির আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলর মধ্যে একটি। ১৮৯৩ সালে তৈরি এই দালানটির মধ্যে প্রায় ২০০ টি ব্র্যান্ড সম্বলিত একটি আধুনিক শপিং মল রয়েছে। দালানটির আর্কিটেকচারাল, পেইন্টিং ও মোজাইক এর নান্দনিক সৌন্দর্য এবং কেনাকাটার জন্য প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এখানে ছুটে আসে।
ব্লু মাউন্টেন (Blue Mountains) :
সিডনিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে চাইলে যেতে হবে শহরের বাহিরে ব্লু মাউন্টেনে। এখানে দেখা মিলবে ইউক্যালিপটাসের বন, অসংখ্য পাহাড় এবং ছোট ছোট ঝর্না। এখানে রয়েছে থ্রি সিস্টার সাইট, কাটুম্বা গ্রাম, ক্যাবেল রাইড, সিনিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ট্রেন রাইড সহ আরও অনেক কিছু।
আরও পড়ুনঃসেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড
সিডনি ভ্রমণের সময়
সিডনি বছরের যে কোন সময় ঘুরে বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত। সিডনিতে ঠাণ্ডা কম থাকায় এখানে তুষারপাত হয় না। তবে অক্টোবর শেষের দিক থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সিডনি ঘুরবার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তখন গরম কম থাকে এবং দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভীড় অনেক কম থাকে।
সিডনিতে যাবার উপায়
বাংলাদেশ থেকে সিডনিতে যাবার জন্য বিমানই একমাত্র বাহন। বিমানে ভাড়া এয়ারলাইন্স ও কোন সময়ে বুকিং দিচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে খরচের তারতম্য হতে পারে।
যে কোন দেশে ভ্রমণের জন্য ভিসা প্রয়োজন। সিডনীতে ভ্রমণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার টুরিস্ট ভিসা নিতে হবে। টুরিস্ট ভিসা আবেদনের জন্য কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদের পাসপোর্ট থাকা লাগবে। ভিসা আবেদনের সময় পুরাতন যত পাসপোর্ট আছে এবং আগে কোথাও ভিসা আবেদন বাতিল হলে সেই দেশের কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা চিঠি। অস্ট্রেলিয়ান ভিসার ফিল আপ এবং ভিসা আবেদনকারীর স্বাক্ষর করা ফর্ম। এছাড়া বর্ডার ছাড়া, সাদা ব্যকগ্রাউন্ডে তোলা 35mm x 45mm সাইজের দুটি পাসপোর্ট সাইজ সদ্য তোলা ছবি লাগবে। এয়ারলাইন ও হোটেল রিসারভেশন, অস্ট্রেলিয়ায় পরিচিত কেউ থাকলে তার কাছ থেকে পাওয়া ইনভিটেশন লেটার, এনওসি লেটার, গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও স্যালারি স্লিপ এবং পেশাগত সমস্ত প্রকার প্রমান ভিসার সাথে জমা দিতে হয়।
প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট সহ ভিসা অফিসারকে উদ্দেশ্য করে একটি কভার লেটার দিতে হয় এবং আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, ব্যায়ভার, দেশে ফেরত আসবার নিশ্চয়তা, থাকবার ব্যবস্থা ইত্যাদি বর্ণনা করে ভিসার আবেদন করতে হয়। সমস্ত ডকুমেন্ট ঠিক থাকলে এবং কোন প্রকার তথ্য গোপন না করলে দ্রুত ভিসা পাওয়া যায়। টুরিস্ট ভিসা ফি ৯০৪০ টাকা তবে সাথে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ক্লায়েন্ট অনুযায়ী বায়োম্যাট্রিক কালেকশন এর জন্য সাথে আরও প্রায় ৩০০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়।
সিডনিতে কোথায় থাকবেন
সিডনি শহরের মাঝখানে থাকতে চায়লে সি বি ডি হচ্ছে উপযুক্ত জায়গা। এখান থেকে অপেরা হাউস, পিট স্ট্রিট, সেন্ট্রাল ইত্যাদি স্থানগুলো থেকে হেঁটে ঘুরে আসা যায়।যারা হোটেল থেকে অপেরা হাউস, সিডনি হারবার, হারবার ব্রিজের দৃশ্য দেখতে চান তাদের জন্য দা রক্স নামের জায়গাটি উপযুক্ত । এখানে বাজেট সাশ্রয়ী হোটেল সহ ৫ তারকার মানের অনেক হোটেল আছে। বাস এবং ট্রেনের যাতায়াত এর সুবিধার জন্য সেন্ট্রালে হোটেল নিলে সবচেয়ে সুবিধাজনক। শহর থেকে একটু দূরে মহল্লা গুলোতে থাকতে চাইলে গামট্রি এবং এয়ার বি আন বি নামক ওয়েবসাইটে খোঁজ নিয়ে খুজে নিতে হবে। এছাড়া নিজের বাজেট অনুযায়ী হোটেল খুঁজবার জন্য বুকিং ডট কম, মাইট্রিপ ডট কম, ট্রিপ এডভাইসরইত্যাদি ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন।
কোথায় কি খাবেন
সিডনিতে বর্তমানে বিভিন্ন দেশের মানুষজনের বসবাস ফলে এখানে খাবার এর বেলায় আসছে ঐতিহ্যের পরিবর্তন এবং পাওয়া যাচ্ছে বৈচিত্র্য। এখানে প্রচুর ইন্ডিয়ান ও বাঙালি রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়াও এখানে হালাল খাবারের জন্য রয়েছে লেবানিজ, টারকিশ, আরবীয় খাবারের হোটেল। এখানে খাবারের জন্য প্রতি বেলা ২০ থেকে ৩০ ডলার খরচ করতে হয়। একটু সস্তায় খেতে চাইলে যেকোনো জায়গায় কে এফ সি, ম্যাকডোনাল্ডস, হাংরি জ্যাক্স, ডমিনোস থাকে খেতে হবে। এসব জায়গায় ৫ ডলার থেকে ১৫ ডলারের ভিতরে খাওয়া যায়।
কেনাকাটা
ফ্যাশন সচেতন পর্যটকদের জন্য সিডনি অনেক বড় বড় শপিংমল রয়েছে যেখানে নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। পিট স্ট্রিট শপিং মল সিডনির সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় শপিং মল। এখানে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রিটেইল ব্র্যান্ডের প্রায় সব দোকান। পিট শপিং মলের আসেপাশে ছোট ছোট আরও অনেক শপিং মল রয়েছে। সিডনিতে কুইন ভিক্টোরিয়া বিল্ডিং, ওয়ার্ল্ড স্কয়ার, শেফ্লি প্লাজা জনপ্রিয় শপিং এর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
অন্যান্য জরুরী বিষয়
- অস্ট্রেলিয়ায় বিমানে ভ্রমণের সময় খাবার সাথে থাকলে তা এয়ারপোর্টে ডিক্লেয়ার করে নিতে হয়। ডিক্লেয়ার না করলে ২০০ থেকে ১০০০ ডলার জরিমানা হতে পারে।
- কম খরচে ঘুরবার জন্য প্রত্যেকের অপাল কার্ড করে নিতে হবে। অপাল কার্ড দিয়ে বাসে, ট্রেনে ,ফেরীতে চড়া যায় এবং প্রায় প্রত্যেক ট্রেন স্টেশনে অপালে টাকা ভরবার মেশিন আছে।
- সিডনি তে ঘুরে ভেড়ানোর জন্য খুব সকাল সকাল বের হতে হয় কারণ এখানে সবকিছু তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
- এখানে সমুদ্রে নামলে সবসময় লাইফগারডের কথা শোনা এবং শারক নেট খেয়াল করে চলা জরুরী।