চা-বাগানের (Tea Garden) জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী। মৌলভীবাজার জেলায় ৯২ টির মত চা বাগান রয়েছে। ৪৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের নজরকাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটক ছুটে আসেন শ্রীমঙ্গলে। মাইলের পর মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত চা বাগান দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন পাহাড়ের ঢালে সবুজ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ও উন্নত মানের চা শ্রীমঙ্গলেই উৎপন্ন হয়ে।
শ্রীমঙ্গলের প্রবেশ পথে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্য দর্শনার্থীদের নজর কাড়ার মত। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসণের উদ্যোগে এ ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে সাতগাঁও চা-বাগানের সহায়তায়। ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্যের সামনে থেকেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয় সাতগাঁও চা-বাগান। চা বাগানগুলোতে ইংরেজদের শাসনকালের স্মৃতি বহনকারী কাঠের তৈরি সাদা রঙের ভবনে ম্যানেজারেরা বাস করেন। আর তাই চা বাগানের জীবন যাত্রাতেও ইংরেজ আমলের অনেক স্মৃতি লক্ষ করা যায়।
শ্রীমঙ্গল চা-বাগান যাবার উপযুক্ত সময়
বছরের যে কোন সময় ঘুরতে পারেন চা বাগান গুলোতে। তবে সাধারণত মে মাস থেকে চাপাতা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এ সময়ে কর্মচঞ্চল চা বাগান সবুজে পরিপূর্ণ থাকে। চা-শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা ও জীবনচিত্র দেখতে চাইলে মে থেকে অক্টোবরে মাঝা মাঝি সময় ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগান থেকে। এছড়া বছরের যে কোন সময় ঘুরতে যেতে পারেন চা বাগান গুলোতে।
শ্রীমঙ্গল কি কি দেখবেন
চা বাগান ঘুরে দেখার জন্যে মৌলভীবাজার জেলার যে কোন জায়গায়র চা বাগান ঘুরে দেখতে পারেন। তবে শ্রীমঙ্গল উপজেলার উঁচু নিচু টিলার চা বাগান গুলোর সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। শ্রীমঙ্গলের কাছেই চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) ভেতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেলে দেখা মিলবে ফিনলের চা-বাগান, এখানে বিটিআরআই-এর নিজস্ব বাগান রয়েছে। ভানুগাছ সড়ক ধরে কয়্যেছেকিছু দূরগেলেই দেখা মিলবে জেরিন টি-এস্টেটের। এছাড়া লাউয়াছড়ার কিছুটা আগে ডান দিকের জঙ্গলঘেরা পথ নিয়ে যাবে নূরজাহান টি-এস্টেটে। এ পথে আরো চমৎকার কিছু চা বাগান রয়েছে। শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জে যাওয়ার পথে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সময় করে ঘুরে আসতে পারেন। কমলগঞ্জ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাহাড়ঘেরা চা-বাগানের মধ্যে সুবিশাল মাধবপুর লেক। ভ্রমণ শেষ করে শ্রীমঙ্গল ফেরার পথে নীলকণ্ঠ কেবিনের সাতরঙা চা পান করতে ভূল করবেন না। শহরের বিজিবি সদর দপ্তরের পাশে নীলকণ্ঠের একটি শাখা রয়েছে।
তাই সবচেয়ে ভালো হয় আশেপাশের দর্শনীয় স্থান সহ ঘুরে দেখা। তাহলেই আপনার চা বাগান দেখা হয়ে যাবে। চা-বাগান ঘুরার জন্য জিপ সবচেয়ে ভালো বাহন। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে চা-বাগানে সারাদিন ভ্রমণে জন্য একটি জিপ ভাড়া করতে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। এছাড়া সিএনজি বা অটোরিক্সা নিয়েও ৩-৫ জন আরামে ঘুরে দেখতে পারবেন সবকিছু। কি কি ঘুরে দেখতে চান আগে থেকেই কথা বলে নিবেন। সারাদিনের জন্যে সিএনজি ভাড়া নিবে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।
শ্রীমঙ্গল কি ভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে হাম হাম যেতে শ্রীমঙ্গল হয়ে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। কমলাপুর বা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, পারাবত, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে প্রথমে শ্রীমঙ্গল আসতে পারবেন। শ্রেনীভেদে ভাড়া ২৪০ থেকে ৫৫২ টাকা। ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা।
বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি ও নন এসি বাস পাওয়া যায়। এসব বাসে ভাড়া জনপ্রতি ৪৭০ থেকে ৬০০ টাকা । ঢাকা থেকে বাসে করে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে শ্রীমঙ্গল পৌঁছে যেতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্যে রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর আকর্ষণীয় রিসোর্ট। এখানে ভ্র ঘেঁষা অনেক কটেজ ও সরকারি বেসরকারি গেস্ট হাউজ রয়েছে। এছারাও শ্রীমঙ্গল শহরেও রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল। আপনার চাহিদা ও বাজেট মত যে কোন জায়গায় থাকতে পারবেন। লাউয়াছড়ার খুব কাছে গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট নামে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট রয়েছে। চা বাগান ঘেঁষা ও সুন্দর পরিবেশের রিসোর্ট গুলোর মধ্যে অন্যতম।
আরও পড়ুনঃ জাফলং ভ্রমণ তথ্য
শ্রীমঙ্গলে থাকার হোটেল ও রিসোর্ট
শ্রীমঙ্গল রিসোর্ট গুলোর মধ্যে –
টি রিসোর্ট ও মিউজিয়াম – বাংলাদেশ টি বোর্ডের অধীনে এই রিসোর্ট শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, বাংলো ধরণের প্রতিটি কটেজে ৪-৮ জন থাকা যায়। প্রতি রাতের ভাড়া ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01749-014306।
নভেম ইকো রিসোর্ট – আধুনিক সুযোগ সুবিধা তো দৃষ্টিনন্দন নানা কটেজে রয়েছে। মাটির ঘর, কাঠের ঘর, ফ্যামিলি ভিলা, তাবুতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিরাত ২-৮ জন থাকার জন্যে মান অনুযায়ী ভাড়া ৮,০০০ থেকে ১৭৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01709 882000।
নিসর্গ ইকো কটেজ – এই কটেজ শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, গ্রামীন আবহে তৈরি কটেজ গুলোতে ৩-৫ জন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া প্রতি রাত ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01766-557780।
নিসর্গ লিচিবাড়ি কটেজ – এই কটেজ শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোডের পাশে অবস্থিত, গ্রামীন আবহে তৈরি কটেজ গুলোতে ৩-৮ জন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া প্রতি রাত ২০০০ থেকে ৪৫০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01766-557780।
লেমন গার্ডেন রিসোর্ট – লাউয়াছড়া উদ্যানের পাশেই এই রিসোর্টের অবস্থান। ইকোনমি, ডিলাক্স, লাক্সারি, সুইট মানের রুম ভাড়া ৩,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা। যোগাযোগঃ 01763555000।
শান্তি বাড়ি রিসোর্ট – শ্রীমঙ্গল – ভানুগাছা রোড ধরে লাউয়াছড়ার আগে একটু ভিতরের দিকের এই রিসোর্টের অবস্থান। এখানে রয়েছে নানা ধরণের কটেজ। এই নাম্বারে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিন 01716189288।
সিজন ও সময় অনুযায়ী উপরোক্ত রিসোর্ট ও কটেজ গুলোর ভাড়া পরিবর্তন হতে পারে। বিভিন্ন সময় কটেজ গুলোতে অনেক রকম ডিসকাউন্ট থাকে। যেখানেই থাকন কটেজ ঠিক করার আগে তাদের সাথে কথা বলে নিবেন, প্রয়োজনে ভাড়ার ক্ষেত্রে একটু দরদাম করে নিবেন। এছাড়া আরও কম খরচে শ্রীমঙ্গল থাকতে চাইলে শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল আছে, একটু খুঁজে দেখলেই পেয়ে যাবেন আপনার মন মত ও বাজেট অনুযায় হোটেল।
প্রয়োজনীয় পরামর্শ
যে কোনো চা-বাগানে প্রবেশের পূর্বে অবশ্যই বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিন।