বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (Varendra Research Museum) রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে বরেন্দ্র জাদুঘর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় ১৯১০ সালে নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এর শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্রের বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন। তখন বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। এই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য জাদুঘরটির নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের খনন কাজ শুরু করে। পরবর্তিতে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির একক প্রচেষ্টায় পাহাড়পুর থেকে ২৫৬টি নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের পরে জাদুঘরটির অস্তিত্ত্ব নিয়ে বিভিন্ন সংকট দেখা দেয়। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ পযর্ন্ত জাদুঘর ভবনটির অর্ধেকাংশ মেডিকেল স্কুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে জাদুঘরটি বন্ধ হবার উপক্রম হলে ঐ বছরের ১০ অক্টোবর তারিখে এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিগ্রহণ করে। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সহ বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন।
বরেন্দ্র জাদুঘরের নিদর্শনসমূহ
প্রায় ৯ হাজারেরও অধিক নিদর্শন রয়েছে রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরে । জাদুঘরের সংগ্রহশালায় রয়েছে সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন, মহেনজোদারো সভ্যতার প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি, গঙ্গা মূর্তি, একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধ মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, মোঘল আমলের রৌপ্র মুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা ইত্যাদি।
সময়সূচী
শনিবার থেকে বুধবার বরেন্দ্র জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতি, শুক্রবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত ছুটির দিনগুলোতে বরেন্দ্র জাদুঘর বন্ধ থাকে।
বরেন্দ্র জাদুঘর কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং বিমান, সকল পথেই আপনি সহজেই রাজশাহী যেতে পারবেন। রাজশাহীতে পৌছার পর শহরের মূল কেন্দ্র জিরো পয়েন্টের কাছেই রাজশাহী কলেজের পাশে জাদুঘরটি পাওয়া যাবে। বরেন্দ্র জাদুঘরের পুর্ব দিকে সদর হাসপাতাল, দক্ষিণে প্রমত্তা পদ্মা নদী ও উত্তরে হেতেম খা বড় মসজিদ অবস্থিত। আপনি শহরের যেকোন জায়গা থেকে ইজিবাইকে কিংবা রিক্সা করে খুব সহজেই বরেন্দ্র জাদুঘর যেতে পারবেন।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের প্রবেশমূল্য
বরেন্দ্র জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা প্রবেশমূল্য নির্ধারন করা হয়েছে।
কোথায় খাবেন
বরেন্দ্র জাদুঘর শহরের মূল কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এর পাশেই বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্তোরা রয়েছে।
থাকার হোটেল
রাজশাহী শহরে থাকার বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। রাজশাহী চিড়িয়াখানার পাশে আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল (০৭২১-৭৭৫২৩৭)। ঢাকার পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় (০২-৮৮৩৩২২৯, ৮৮৩৪৬০০) থেকেও যোগাযোগ করে এ হোটেলের বুকিং দেওয়া যায়। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেলের সিঙেল এসি রুম ২০০০ টাকা, এসি ডাবল রুম ৩০০০ টাকা, সুইট ৫০০০ টাকা। এছাড়া চাইলে আপনি রাজশাহী শহরের অন্যান্য হোটেলে থাকতে পারবেন
রাজশাহী শহরের উল্লেখযোগ্য হোটেল
শিরোইলে হোটেল হকস্ ইন্ (০৭২১-৮১০৪২০), গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭৬১৮৮), বিন্দুর মোড়ে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৮১১৪৭০),সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭১১০০), মালোপাড়ায় হোটেল শুকরান (০৭২১-৭৭১৮১৭) ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় কক্ষ পাবেন।